কিছুদিন আগেই আমাদের দেশে কোটা সংস্করণ আন্দোলন হয়। ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে বয়স্ক মানুষ সবাই এই আন্দোলন সম্পর্কে জানে। আর বর্তমানে বাচ্চাদের পরীক্ষার প্রশ্নের কোটা সংস্করণ আন্দোলন নিয়ে রচনা লিখতে বলা হয়। তাই আমরা এখানে কোটা সংস্করণ আন্দোলন নিয়ে সহজ ভাষায় রচনা লিখেছি। এই কোটা সংস্কার আন্দোলন রচনা SSC HSC ১৫ ২০ ২৫ ৩০ পয়েন্ট শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে সাহায্য করবে।
এই রচনাটি ৩য় থেকে ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য সহজ ভাষায় লেখা হয়েছে। ছোট ক্লাসের পরীক্ষায় অনেক সময় “কোটা সংস্কার আন্দোলন সম্পর্কে ১০টি বাক্য লিখুন” বলা হয়, আবার চাকরি বা ভর্তি পরীক্ষায় “কোটা সংস্কার আন্দোলন সম্পর্কে অনুচ্ছেদ লিখুন” আসতে পারে।
বাংলা ২য় পত্রের জন্য উপযোগী করে এটি লেখা হয়েছে, যাতে শিক্ষার্থীরা সহজেই পড়ে বুঝতে পারে এবং মুখস্থ রাখতে পারে। ভাষা সহজ ও সাবলীল, তাই একবার পড়লেই মনে রাখা যাবে। তবে চলুন আর দেরি না করে রচনাগুলো দেখে নেওয়া যাক কোটা সংস্কার আন্দোলন রচনা SSC HSC ১৫ ২০ ২৫ ৩০ পয়েন্ট-
কোটা সংস্কার কোটা সংস্কার আন্দোলন রচনা ২০২৪
বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে ওঠে। চাকরি প্রত্যাশী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতৃত্বে এই আন্দোলন শুরু করেন। জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলন বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও ধর্মঘটের মাধ্যমে ক্রমশ তীব্র হয়ে ওঠে।
প্রথমদিকে আন্দোলন শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের মাধ্যমে চলছিল। তবে, ১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বক্তৃতায় আন্দোলনকারীদের পরোক্ষভাবে “রাজাকারের নাতি-পুতি” বলে অভিহিত করেন। এই মন্তব্যের পর আন্দোলনকারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদ জানায় এবং নতুন স্লোগান তোলে—
“তুমি কে? আমি কে? রাজাকার, রাজাকার!”
“কে বলেছে? কে বলেছে? স্বৈরাচার, স্বৈরাচার!”
“চাইতে গেলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার!”
আন্দোলনের প্রেক্ষাপট এবং পটভূমি
দীর্ঘ ৪৬ বছর ধরে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা চালু ছিল। এই ব্যবস্থায় বিভিন্ন ক্যাটাগরির জন্য সংরক্ষিত আসন থাকায় মেধার ভিত্তিতে প্রতিযোগিতার সুযোগ সীমিত হয়ে আসছিল বলে শিক্ষার্থীরা দাবি করেন। শিক্ষার্থীদের মূল দাবি ছিল:
কোটা সংখ্যা কমিয়ে ১০% এ আনা
মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ নিশ্চিত করা
কোটা সুবিধা একবার ব্যবহার হলে পুনরায় সুযোগ না দেওয়া
কোটা থাকলে পদ পূরণ না হলে মেধা তালিকা থেকে নিয়োগ দেওয়া
কোটা সংস্কার নিয়ে সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা
সরকারের কোটা বাতিলের ঘোষণা
সাধারণ শিক্ষার্থীদের লাগাতার আন্দোলনের ফলে সরকার ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থা বাতিলের ঘোষণা দেয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত একটি পরিপত্র প্রকাশ করে, যেখানে উল্লেখ ছিল:
৯ম গ্রেড (প্রথম শ্রেণি) এবং ১০ম-১৩তম গ্রেড (দ্বিতীয় শ্রেণি) এর পদে সরাসরি মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে।
এই পদগুলোর ক্ষেত্রে পূর্বের কোটা ব্যবস্থা বাতিল করা হলো।
এটি শিক্ষার্থীদের জন্য এক বড় অর্জন হিসেবে বিবেচিত হয় এবং আন্দোলন তখনকার মতো স্থগিত হয়।
আইনি চ্যালেঞ্জ ও হাইকোর্টের রায়
২০২১ সালে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের পক্ষে অহিদুল ইসলামসহ সাতজন ব্যক্তি হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন, যেখানে তারা কোটা পুনর্বহালের দাবি জানান।
২০২৪ সালের ৫ জুন, বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে এবং রায় দেন যে পূর্বের কোটা ব্যবস্থা বহাল থাকবে।
পুনরায় আন্দোলনের সূত্রপাত
এই রায়ের পরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটা পুনঃসংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।
আন্দোলন শুরু হলে ঈদ ও গ্রীষ্মকালীন ছুটির কারণে এটি সাময়িকভাবে স্থগিত ছিল, তবে ছুটি শেষে আবার শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন শুরু হয়।
আন্দোলন ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে
এই আন্দোলন শুধুমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও এতে যোগ দেন। উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ছিল:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়
ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় (IUB)
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ লিবারেল আর্টস (ULAB)
নর্দান ইউনিভার্সিটি
শিক্ষার্থীরা “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন” ব্যানারে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন এবং “বাংলা ব্লকেড” নামে অবরোধ কর্মসূচি পালন শুরু করেন।
১০ জুলাই আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়ের ওপর চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা জারি করে, অর্থাৎ রায় কার্যকর করা হয়নি।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেছেন যে তাদের আন্দোলন আদালতের বিরুদ্ধে নয়, বরং সরকারের কাছে কোটা সংস্কারের চূড়ান্ত সমাধান চাওয়া। তারা কোটা পুনঃপরীক্ষা করে যৌক্তিক ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
সংগঠন ও গঠনপ্রক্রিয়া
বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বড় ভূমিকা রয়েছে। মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ তৈরি করে এবং আন্দোলনের পরিকল্পনা করে। পরে এই আন্দোলনকে আরও সুসংগঠিত করতে তারা বিভিন্ন ধরণের কমিটি গঠন করে, যার মধ্যে রয়েছে সমন্বয় কমিটি, আহ্বায়ক কমিটি এবং কেন্দ্রীয় কমিটি।
এই কমিটিগুলোর প্রধান কাজ হলো আন্দোলনের দিকনির্দেশনা প্রদান করা এবং ক্যাম্পাসগুলোতে আন্দোলনকে আরও বিস্তৃত করা। সংগঠনের সদস্যরা বিভিন্ন প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করে যাতে আরও শিক্ষার্থী তাদের আন্দোলনে যোগ দেয়। ক্যাম্পাসে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য তারা পোস্টার, লিফলেট বিতরণ, অনলাইন ক্যাম্পেইন এবং সরাসরি শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগের মতো বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করে।
সংগঠনের এক সমন্বয়কের মতে, এই আন্দোলনে কোনো নির্দিষ্ট একক নেতা নেই। এটি একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা, যেখানে নেতৃত্ব ভাগাভাগি করে পরিচালিত হয়। আগের কোটা সংস্কার আন্দোলনের অভিজ্ঞ কর্মী এবং বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সদস্যরাও এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন এবং সমন্বয় কমিটির মাধ্যমে আন্দোলন পরিচালনা করা হয়। তবে, বিতর্ক এড়ানোর জন্য এবং আন্দোলনকে নিরপেক্ষ ও শিক্ষার্থীবান্ধব রাখতে, যেকোনো রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের সদস্যদের সরাসরি এই আন্দোলনে যুক্ত করা থেকে বিরত রাখা হয়েছে।
এই কাঠামোবদ্ধ সংগঠন এবং পরিকল্পিত কার্যক্রমের মাধ্যমেই শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলনকে শক্তিশালী ও সুসংগঠিত করেছে, যা বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
নয় দফা
বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দমন-পীড়ন চালানো হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে শত শত শিক্ষার্থী নিহত ও অসংখ্য শিক্ষার্থী আহত হওয়ার প্রেক্ষিতে, ২৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সরকারের রাষ্ট্রীয় শোক প্রত্যাখ্যান করেন। তারা প্রতিবাদস্বরূপ লাল কাপড় বেঁধে ছবি তোলা এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রচারের ঘোষণা দেন। একইসঙ্গে তারা দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নয় দফা দাবি উত্থাপন করেন।
পরবর্তীতে, ৩ আগস্ট সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেওয়া হয় এবং ৪ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা আসে। আন্দোলনকারীদের নয় দফা দাবিসমূহ ছিল নিম্নরূপ:
নয় দফা দাবি
প্রধানমন্ত্রীর প্রকাশ্যে ক্ষমা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছাত্র-নাগরিক হত্যার দায় নিয়ে জাতির কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
দায়ী মন্ত্রীদের পদত্যাগ
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় ক্যাডারদের দ্বারা শিক্ষার্থী হত্যার দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে মন্ত্রিপরিষদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে।
এছাড়া, ইন্টারনেট শাটডাউন ও ডিজিটাল ক্র্যাকডাউনের জন্য তথ্য প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় মিথ্যা প্রচারণার জন্য তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাতকে পদত্যাগ করতে হবে।
দায়ী পুলিশ ও কর্মকর্তাদের বরখাস্ত
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্র-নাগরিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার ও পুলিশ সুপারদের বরখাস্ত করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়বদ্ধতা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ যেখানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়েছে, সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরদের পদত্যাগ করতে হবে।
গুলির দায়ে অপরাধীদের শাস্তি
শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের ও দ্রুত বিচার করতে হবে।
শহীদ ও আহত শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণ
আন্দোলনে নিহত ও আহত শিক্ষার্থীদের পরিবারকে দ্রুত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
ছাত্রলীগসহ দলীয় ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধকরণ
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগসহ দলীয় ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে ছাত্র সংসদ কার্যকর করতে হবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হল খুলে দেওয়া
কারফিউ তুলে নিয়ে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হল খুলে দিতে হবে এবং ক্যাম্পাস থেকে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সোয়াট ও সেনা সদস্যদের সরিয়ে নিতে হবে।
গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহার
আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ও প্রশাসনিক হয়রানি না করার নিশ্চয়তা দিতে হবে এবং ইতোমধ্যে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কর্তৃক ৯ দফা দাবি
৩০ জুলাই, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সংগঠন থেকে শিক্ষার্থীদের মুক্তি ও ন্যায়বিচারের দাবিতে আরও নয়টি দাবি উত্থাপন করা হয়। এগুলো হলো:
স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের অধীনে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে শিক্ষার্থী হত্যাকাণ্ডের দায়ীদের চিহ্নিত করা ও শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে।
নিহতদের তথ্য প্রকাশ ও ক্ষতিপূরণ
নিহত শিক্ষার্থীদের পরিচয়সহ বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করতে হবে এবং আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
গায়েবি মামলা ও ‘ব্লক রেইড’ বন্ধ করা
শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দায়ের ও ঢালাওভাবে গ্রেপ্তার বন্ধ করতে হবে এবং আটক ব্যক্তিদের মুক্তি দিতে হবে।
ডিবিতে আটককৃতদের মুক্তি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয়জন সমন্বয়ককে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষতা বজায় রাখা
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা বন্ধ করতে হবে এবং তাদের নিরপেক্ষ রাখা নিশ্চিত করতে হবে।
অন্যায়ভাবে কাউকে আটক না করা
যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে কাউকে আটক করে থানায় নেওয়া যাবে না।
ইন্টারনেট ও বাকস্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ
ইন্টারনেট শাটডাউন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করতে হবে এবং বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।
ছাত্ররাজনীতির সংস্কার
লেজুড়ভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে গণতান্ত্রিক উপায়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে।
নাগরিক অধিকার নিশ্চিতকরণ
জনগণের ভোটাধিকারসহ অন্যান্য নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে এবং সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।
এক দফা আন্দোলন
বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশ হিসেবে এক দফা আন্দোলন শুরু হয়। ৩ আগস্ট, শহীদ মিনারে বিপুল সংখ্যক ছাত্র, তরুণ-যুবক এবং সাধারণ নাগরিকরা সমবেত হন। আন্দোলন ধীরে ধীরে বড় আকার নিতে থাকে, যেখানে শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, বয়স্ক নাগরিকরাও বিক্ষোভে অংশ নেন।
কোনো ধরনের ট্যাক্স বা খাজনা প্রদান করা যাবে না।
বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি—কোনো বিল পরিশোধ করা যাবে না।
সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি অফিস, কল-কারখানা, আদালত সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
প্রবাসীরা কোনো ধরনের রেমিট্যান্স ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে পাঠাবেন না।
সব সরকারি সভা, সেমিনার, অনুষ্ঠান বর্জন করতে হবে।
বন্দরকর্মীরা কাজে যোগ দেবেন না, কোনো পণ্য খালাস করা যাবে না।
দেশের সব কলকারখানা বন্ধ থাকবে, বিশেষ করে গার্মেন্টস সেক্টরের শ্রমিকরা কাজে যাবেন না।
গণপরিবহন বন্ধ থাকবে, শ্রমিকদের কাজে না যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জরুরি ব্যক্তিগত লেনদেনের জন্য শুধুমাত্র প্রতি সপ্তাহের রোববার ব্যাংক খোলা থাকবে।
অর্থ পাচার বন্ধ।
বিলাস দ্রব্যের দোকান, বিপণিবিতান, হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকবে।
কোন কোন সেবা চালু থাকবে:
হাসপাতাল, ফার্মেসি, ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পরিবহন।
অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, গণমাধ্যম, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য পরিবহন, জরুরি ইন্টারনেট সেবা, ত্রাণ সহায়তা।
এই খাতে কর্মরত ব্যক্তি ও পরিবহন চালু থাকবে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকান প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
এটি একটি দীর্ঘ এবং বিস্তারিত প্রতিবেদন, যা ২০২৪ সালের বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ঘটনাপ্রবাহকে তুলে ধরে। আমি এটিকে আরও সহজ, সাধারণ ভাষায় এবং পাঠযোগ্যভাবে পুনর্লিখন করব।
২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের ঘটনাপ্রবাহ
বাংলাদেশে ২০২৪ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন দেশজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন তোলে। এই আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থার সংস্কার। শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা এই দাবিতে একযোগে রাজপথে নামে, যা পরবর্তীতে সহিংস রূপ নেয় এবং সরকারের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে।
শুরুর পর্যায় (৫ জুন – ৯ জুলাই)
৫ জুন: হাইকোর্টের রায়ে ২০১৮ সালে সরকারি চাকরির কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়।
৬ জুন: রায়ের প্রতিবাদে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা দেশব্যাপী বিক্ষোভ শুরু করে।
৯ জুন: হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে।
১০ জুন: আন্দোলনকারীরা সরকারকে ৩০ জুন পর্যন্ত সময় দেয় এবং ঈদুল আজহার কারণে সাময়িক বিরতি ঘোষণা করে।
১-৭ জুলাই: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ, মানববন্ধন এবং সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়।
৭ জুলাই: শিক্ষার্থীরা “বাংলা ব্লকেড” কর্মসূচি ঘোষণা করে, যার আওতায় দেশব্যাপী বিক্ষোভ, মিছিল এবং রাস্তা অবরোধ করা হয়।
বাংলা ব্লকেড ও পুলিশের দমন-পীড়ন (১০ – ১৫ জুলাই)
১০ জুলাই: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শাহবাগ অবরোধ করে। সরকার আন্দোলন বন্ধ করতে চেষ্টা করে, তবে শিক্ষার্থীরা দাবি থেকে পিছু হটেনি।
১১-১২ জুলাই: ঢাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের কাঁদানে গ্যাস, জলকামান ও লাঠিচার্জের মাধ্যমে দমন অভিযান চালানো হয়। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলার খবর আসে।
১৩-১৪ জুলাই: শিক্ষার্থীরা সারা দেশে রেলপথ ও সড়কপথ অবরোধ করে। আন্দোলন দমন করতে সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ৪জি নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়।
১৫ জুলাই: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগ ও পুলিশের হামলায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা (১৬ – ১৯ জুলাই)
১৬ জুলাই: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ হামলা চালায়। আন্দোলন দমনে সরকার ইন্টারনেট ধীর করে দেয়।
১৭ জুলাই: ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশের হামলায় বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়। রাজধানীর নতুন বাজার, বসুন্ধরা, মিরপুর, ও চট্টগ্রামে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
১৮-১৯ জুলাই: আন্দোলন আরও সহিংস রূপ নেয়। চট্টগ্রামে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়। ঢাকায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা আন্দোলনকারীদের ওপর লাঠিচার্জ করে।
সরকারের দমন-পীড়ন ও কারফিউ জারি (২০ – ২২ জুলাই)
২০ জুলাই: সরকার দেশব্যাপী ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয় এবং কারফিউ জারি করে।
২১ জুলাই: সুপ্রিম কোর্ট কোটা বাতিলের রায় স্থগিত করে এবং মেধার ভিত্তিতে ৯৩% নিয়োগের নির্দেশ দেয়।
২২ জুলাই: ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা চলতে থাকে। শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার ও নির্যাতনের খবর পাওয়া যায়।
আন্দোলন স্থগিত ও গণগ্রেফতার (২৩ – ২৮ জুলাই)
২৩-২৪ জুলাই: সরকার আন্দোলন দমনের জন্য ব্যাপক ধরপাকড় চালায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
২৫-২৬ জুলাই: আন্দোলনের শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করা হয়।
২৭ জুলাই: কারফিউ জারি থাকলেও কিছু কিছু এলাকায় আন্দোলন চলতে থাকে।
২৮ জুলাই: আন্দোলনের প্রধান সংগঠকদের কারাবন্দি অবস্থায় “আন্দোলন প্রত্যাহারের” ঘোষণা দিতে বাধ্য করা হয়, যা শিক্ষার্থীরা প্রত্যাখ্যান করে।
আন্দোলনের পুনঃসূচনা (২৯ জুলাই – ৩ আগস্ট)
২৯ জুলাই: আন্দোলনকারীরা জাতিসংঘের তদন্ত দাবি করে।
৩০ জুলাই: শিক্ষার্থীরা লাল ব্যান্ড পরে সরকার ঘোষিত শোক দিবস বর্জন করে।
৩১ জুলাই: দেশজুড়ে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালন করা হয়।
১ আগস্ট: সরকারের চাপে আন্দোলন নেতাদের স্বীকারোক্তি নিতে বাধ্য করা হয়।
শেষ পরিণতি (৪ – ৫ আগস্ট)
৪ আগস্ট: সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তারা সরকারের দমন-পীড়নের নিন্দা জানান।
৫ আগস্ট: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করেন এবং সামরিক হেলিকপ্টারে দেশত্যাগ করেন।
নিহতদের সংখ্যা ও ঘটনার ভয়াবহতা
এই আন্দোলনের অন্যতম প্রতীক হয়ে উঠেছে আবু সাঈদের ছবি, যেখানে তাকে প্রতিবাদী ভঙ্গিতে পুলিশের দিকে হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। পুলিশের গুলিতে সাঈদ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এবং হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়।
৩১ জুলাই ২০২৪ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সম্মিলিত হামলায় সারা দেশে ২৬৬ জনের বেশি নিহত এবং ৬,০০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। সরকারপক্ষের হতাহতদের বাদ দিয়ে নিহতদের ‘শহীদ’ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ জানিয়েছে, এই সহিংসতায় অন্তত ৩২ শিশু নিহত হয়েছে।
সরকারি বাহিনীর নির্বিচারে চালানো গুলিতে শুধু আন্দোলনকারী নয়, বরং যারা আন্দোলনের সাথে সরাসরি জড়িত ছিলেন না তারাও গুলিবিদ্ধ হন।
নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হওয়া মুসল্লি
বাসার নিচে নামতে গিয়ে সাধারণ পথচারী
রাস্তার ফেরিওয়ালা
বাসার ছাদে খেলতে যাওয়া শিশু
আইসক্রিম কিনতে যাওয়া কিশোর
এমন অসংখ্য সাধারণ মানুষ সরকারি বাহিনীর ছোড়া গুলিতে নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ৭৫% ছিল শিশু ও কিশোর, যা ১১৩ জনের বেশি।
আইন অনুযায়ী শিশুদের আটক করা নিষিদ্ধ হলেও, পুলিশ আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিশু ও কিশোরদের আটক করে এবং হাতকড়া পরিয়ে রিমান্ডে নেয়। এতে শিশুদের প্রতি আইনের লঙ্ঘন স্পষ্ট হয়।
উপসংহার: ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন কেবল একটি ছাত্র আন্দোলন ছিল না; এটি রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের নৃশংস উদাহরণ হয়ে উঠেছে। নিরীহ জনগণ, শিশু, কিশোর, ছাত্র এবং পথচারী সবাই এর শিকার হয়েছে। সরকারি বাহিনীর গুলি, গ্রেফতার, নির্যাতন, বেওয়ারিশ লাশ দাফন এবং হাসপাতালগুলোতে উপচে পড়া আহত মানুষের সংখ্যা—সবই এই সহিংসতার ভয়াবহতাকে তুলে ধরে।
সবশেষে,খুব সহজ ভাষায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের সম্পূর্ণ তথ্য এ রচনার মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। কেউ যদি এই রচনাটি মুখস্ত করে তাহলে সে ছাত্র ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে শুরু করে এইচএসসি পর্যন্ত এই রচনা পরীক্ষার খাতায় লিখতে পারবে। আশা করি আপনাদের উপকার হয়েছে। অসংখ্য ধন্যবাদ