মানুষ মুহম্মদ স সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর

মানুষ মুহম্মদ স ইসলামের এক অনন্য মহান ব্যক্তিত্ব। তাঁর জীবনের প্রতিটি দিক আমাদের জন্য এক অনুপ্রেরণার উৎস। এই নিবন্ধে আমরা মানুষ মুহম্মদ স সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর উপস্থাপন করব, যা তাঁর জীবন, শিক্ষা এবং আদর্শের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানাতে সাহায্য করবে।

Table of Contents

মানুষ মুহম্মদ স মূলভাব

মুহম্মদ স ছিলেন বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব, যিনি শান্তি, সহানুভূতি, ন্যায় এবং মানবিকতার বার্তা নিয়ে এসেছিলেন। তিনি তাঁর জীবনের মাধ্যমে সবার জন্য একটি আদর্শ প্রদান করেছেন। মুহম্মদ স-এর জীবন, আচার-ব্যবহার, নীতি এবং তাঁর শিক্ষা বিশ্বজুড়ে মানুষের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। তাঁর জীবনের মূল লক্ষ্য ছিল মানবতার কল্যাণ এবং মানুষের মধ্যে ভালোবাসা, বন্ধুত্ব ও সহানুভূতির প্রচলন।

মুহম্মদ স তাঁর জীবনে শিখিয়েছেন যে, আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ বিশ্বাস, সৎকর্ম, ইবাদত এবং মানবতার জন্য কাজ করা প্রত্যেক মানুষের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি প্রতিটি পরিস্থিতি এবং জীবনের প্রতিটি দিককে আল্লাহর আদেশ ও নৈতিকতার আলোকে বিচার করেছেন।

মুহম্মদ স-এর আদর্শ আজও বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সংস্কৃতি, জাতি এবং সমাজের জন্য একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাঁর জীবনের মাধ্যমে তিনি পৃথিবীকে দেখিয়েছেন, কীভাবে একজন মানুষ শান্তি, ন্যায় এবং মানবিকতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে।

মানুষ মুহম্মদ স মূলভাবের সারাংশ:

মুহম্মদ স-এর জীবন ছিল একটি মানবিক আদর্শ। তাঁর শিক্ষা পৃথিবীজুড়ে আজও মানুষের জন্য আলোর পথ।

মানুষ মুহম্মদ স প্রশ্ন-উত্তর

১. মুহম্মদ স কে ছিলেন?

মুহম্মদ স ছিলেন ইসলাম ধর্মের সর্বশেষ নবী। তিনি ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে মদিনায় তাঁর দেহাবসান ঘটে। তাঁর জীবনের মূল উদ্দেশ্য ছিল মানবজাতিকে আল্লাহর একত্ববাদ এবং ন্যায়ের পথে পরিচালনা করা।

২. মুহম্মদ স এর জীবন থেকে কী শিক্ষা পাওয়া যায়?

মুহম্মদ স এর জীবন আমাদের শেখায় কিভাবে সৎ, ন্যায়পরায়ণ ও সাহসী হতে হয়। তিনি নিজে এক আদর্শ চরিত্রের উদাহরণ, যেখানে দয়ার্দ্রতা, সদ্ভাবনা এবং ঈমানের অটুট বিশ্বাস ছিল। তাঁর শিক্ষা অনুসরণ করে আমরা পারিবারিক, সামাজিক এবং আধ্যাত্মিক জীবনে উন্নতি করতে পারি।

৩. মুহম্মদ স এর সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষা কী ছিল?

মুহম্মদ স এর সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষা ছিল “তুমি যেভাবে তোমার ভাইয়ের জন্য ভাল চাও, তেমনি নিজের জন্য ভাল চাও।” এই শিক্ষা মানবতার প্রতি তাঁর অগাধ ভালোবাসা ও সহানুভূতির প্রতিফলন।

৪. মুহম্মদ স এর সম্পর্ক কেমন ছিল তাঁর পরিবার এবং সহচরদের সাথে?

মুহম্মদ স তাঁর পরিবার এবং সহচরদের সাথে অত্যন্ত দয়া ও সদয় ছিলেন। তিনি তাঁর স্ত্রী, সন্তান এবং সহচরদের প্রতি এক নিবেদিত প্রাণ ছিলেন এবং সব সময় তাঁদের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ করতেন। তাঁর এই সম্পর্কের শিক্ষা আমাদের পরিবারিক জীবনে ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করে।

৫. মুহম্মদ স এর মর্যাদা কীভাবে ইসলামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে?

মুহম্মদ স ইসলামের নবী হিসেবে সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ স্থানে অবস্থান করেছেন। তাঁর উপর নাজিল হওয়া কোরআন মুসলিম বিশ্বের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে এবং তাঁর আদর্শ মানবতার জন্য এক পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করেছে। তাঁর শিক্ষা আমাদের জীবনকে সঠিক পথে পরিচালনা করে।

৬. মুহম্মদ স এর প্রতিটি পদক্ষেপ কেন গুরুত্বপূর্ণ ছিল?

মুহম্মদ স এর প্রতিটি পদক্ষেপ মুসলিম সমাজের জন্য একটি শিক্ষণীয় বিষয়। তাঁর কথা ও কাজের মধ্যে যেভাবে একটানা সত্য, ন্যায় এবং সহানুভূতি প্রকাশ পেয়েছে, তা ইসলামের বিস্তারকে সহায়ক করেছে। তাঁর জীবনে প্রতিটি সিদ্ধান্তই আল্লাহর নির্দেশনার উপর ভিত্তি করে ছিল, যা আমাদের জীবনে অনুসরণ করা উচিত।

৭. মুহম্মদ স এর ধর্মপ্রচারের প্রধান উদ্দেশ্য কী ছিল?

মুহম্মদ স এর ধর্মপ্রচার ছিল মানবজাতির জন্য সঠিক পথ প্রদর্শন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল মানুষের মধ্যে ধর্ম, নৈতিকতা এবং সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা। তিনি ইসলামের মূল বার্তা প্রচার করেন, যা মানুষের মধ্যে সমবেদনা, সহানুভূতি এবং সামাজিক পরিবর্তনের জন্য কাজ করে।

৮. মুহম্মদ স কি কোনো চমৎকার দান করেছেন?

হ্যাঁ, মুহম্মদ স তাঁর জীবনে অসংখ্য দান করেছেন, বিশেষ করে তিনি গরীব, অসহায় এবং অনাথদের প্রতি দয়া দেখিয়েছেন। তিনি ছিলেন পৃথিবীর প্রথম মানবিক নেত্রী, যার মাধ্যমে মানবাধিকার এবং সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল।

৯. মুহম্মদ স কিভাবে ধর্মীয় বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন?

মুহম্মদ স ইসলামের মিশন নিয়ে মক্কা এবং মদিনায় ধর্মীয় বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন। তিনি ভ্রান্ত ধর্মীয় বিশ্বাস এবং সমাজের অসাম্য দূর করার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁর মাধ্যমে ইসলামের একেশ্বরবাদী দৃষ্টিভঙ্গি, ন্যায়ের চেতনা এবং মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

১০. মুহম্মদ স এর প্রভাব আজকের সমাজে কীভাবে রয়েছে?

আজকের সমাজে মুহম্মদ স এর প্রভাব অত্যন্ত শক্তিশালী। তাঁর শিক্ষা ও আদর্শ পুরো বিশ্বের মুসলিম সমাজকে প্রভাবিত করেছে। তাঁর জীবনের মহত্ব আজও মানবতা, শান্তি এবং দয়া প্রতিষ্ঠায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

মানুষ মুহম্মদ স সৃজনশীল প্রশ্ন ১

স্ত্রীর দেওয়া বিষপানে মৃত্যুকালে আরিফ যখন মৃত্যুশয্যায় ছিলেন, তখন বিষদাতার পরিচয় জানতে পেরেও তিনি তাকে উদ্দেশ করে বলেন, “তোমাকে বড়ই ভালোবাসতাম, বড়ই স্নেহ করতাম, তাহার উপযুক্ত কার্যই তুমি করিয়াছ। তোমার চক্ষু হইতে আরিফ চিরতরে বিদায় হইতেছে। সুখে থাক, তোমাকে আমি ক্ষমা করিলাম।”

প্রশ্ন:

 ক. ‘মানুষ মুহম্মদ স’ প্রবন্ধে ‘স্থিতধী’ বলা হয়েছে কাকে?
খ. ‘তাঁহারই দিকে সকলের মহাযাত্রা’। কেন? বুঝিয়ে লেখো।
গ. উপরের উদ্ধৃত অংশে ‘মানুষ মুহম্মদ স’ প্রবন্ধের যে দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “প্রতিফলিত দিকটি ছাড়াও নবী মুহম্মদ স অন্যান্য গুণে গুণান্বিত ছিলেন”—‘মানুষ মুহম্মদ স’ প্রবন্ধের আলোকে বিশ্লেষণ করো।

সমাধান:

ক. ‘মানুষ মুহম্মদ স’ প্রবন্ধে ‘স্থিতধী’ বলা হয়েছে সেই ব্যক্তিকে, যিনি দুঃখ-কষ্ট, বিপদ-আপদ ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও ধৈর্যধারণ করতে পারেন এবং নিজেকে সংযত রাখতে সক্ষম হন। প্রবন্ধে নবী মুহম্মদ স-কে ‘স্থিতধী’ বলা হয়েছে কারণ তিনি জীবনভর অসংখ্য প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েও কখনো বিচলিত হননি এবং মহান সহিষ্ণুতা ও আত্মসংযমের পরিচয় দিয়েছেন।

খ. “তাঁহারই দিকে সকলের মহাযাত্রা” বলা হয়েছে, কারণ পৃথিবীর প্রতিটি জীবের জীবনচক্রের একটি অন্তিম গন্তব্য রয়েছে, আর তা হলো মহান আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তন। মানুষ তার কর্মফল অনুযায়ী পরকালীন জীবনে প্রতিদান পাবে, আর এই জীবন ক্ষণস্থায়ী। তাই প্রত্যেককেই একদিন সৃষ্টিকর্তার কাছে ফিরে যেতে হবে, যা জীবনের এক অনিবার্য সত্য।

গ. উদ্ধৃত অংশে ‘মানুষ মুহম্মদ স’ প্রবন্ধের যে দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে, তা হলো ক্ষমাশীলতা ও উদারতা। নবী মুহম্মদ স-এর জীবনে দেখা যায়, তিনি তাঁর প্রতি অন্যায়কারী ও শত্রুদেরও ক্ষমা করেছেন এবং ভালোবাসার বার্তা দিয়েছেন। হুদাইবিয়া সন্ধি, মক্কা বিজয়ের দিন তিনি শত্রুদের ক্ষমা করে দেওয়া, এমনকি তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিও দয়া প্রদর্শনের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা অসাধারণ। উদ্ধৃত অংশে আরিফ মৃত্যুর মুহূর্তেও বিষদাতাকে ক্ষমা করে দিচ্ছেন, যা নবী মুহম্মদ স-এর ক্ষমাশীলতার দৃষ্টান্তেরই প্রতিফলন।

ঘ. নবী মুহম্মদ স কেবল ক্ষমাশীলতা ও সহিষ্ণুতার জন্যই পরিচিত ছিলেন না, বরং তিনি আরও অনেক মহান গুণাবলীতে গুণান্বিত ছিলেন। ‘মানুষ মুহম্মদ স’ প্রবন্ধের আলোকে অন্যান্য গুণগুলোর বিশ্লেষণ করা যায়—

  • ন্যায়পরায়ণতা: তিনি সর্বদা সত্য ও ন্যায়ের পথে থেকেছেন এবং অন্যদেরও ন্যায়ের শিক্ষা দিয়েছেন।
  • সহমর্মিতা: তিনি এতিম, বিধবা, দাস-দাসীসহ সমাজের নিপীড়িত শ্রেণির প্রতি অত্যন্ত সহানুভূতিশীল ছিলেন।
  • দূরদর্শিতা: রাষ্ট্রনায়ক ও কূটনীতিক হিসেবে তিনি অসাধারণ বিচক্ষণতা দেখিয়েছেন এবং মুসলিম উম্মাহর কল্যাণে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।
  • আত্মনিয়ন্ত্রণ: প্রচণ্ড প্রতিকূল অবস্থায়ও তিনি নিজেকে সংযত রাখতে পারতেন এবং উত্তম চরিত্রের মাধ্যমে সকলকে মুগ্ধ করতেন।
  • নম্রতা ও বিনয়: তিনি ছিলেন বিনয়ী ও অহংকারশূন্য, সাধারণ মানুষের মতো জীবনযাপন করতেন এবং কারো প্রতি কঠোর ব্যবহার করতেন না।

এভাবে, নবী মুহম্মদ স ছিলেন একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যক্তিত্বের অধিকারী, যিনি মানবজাতির জন্য সর্বোত্তম আদর্শ।

মানুষ মুহম্মদ স সৃজনশীল প্রশ্ন ২

এক কাপড়ের ব্যবসায়ী তার দোকানটি রায়হান নামের এক ছেলের দায়িত্বে রেখে বাইরে চলে গেলেন। নানা দুর্বিপাকে দীর্ঘদিন তিনি আর ফিরতে পারলেন না। রায়হান তার কর্তব্যনিষ্ঠা দিয়ে আরো তিনটি দোকান স্থাপন করল।
সাত বছর পর ওই ব্যবসায়ী ফিরে এলে রায়হান দোকানের দায়িত্ব তার হাতে তুলে দেওয়ার জন্য ব্যাকুল হলো। রায়হানের মহৎপ্রাণের পরিচয় পেয়ে ব্যবসায়ী অভিভূত হলেন। তিনি রায়হানের হাতেই দোকান বুঝিয়ে দিয়ে ধর্মকর্মের জন্য আবার বেরিয়ে পড়লেন। বালক তার সততার পুরস্কার পেল।

প্রশ্ন:

 ক. কার মৃত্যুর সংবাদে কারো মুখে কথা সরে না?
খ. “যে বলিবে হযরত মরিয়াছেন, তাহার মাথা যাইবে”—বীরবাহু ওমর এ কথা বললেন কেন?
গ. উদ্দীপকের বিষয়বস্তু মহানবি (স.)-এর গুণাবলির কোন দিকটির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ?
ঘ. সততা কীভাবে মানুষকে মহিমান্বিত করে—উদ্দীপক ও ‘মানুষ মুহম্মদ স’ প্রবন্ধের আলোকে বিশ্লেষণ করো।

সমাধান:

ক. নবী মুহম্মদ স-এর মৃত্যুর সংবাদে সাহাবিরা গভীর শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েন। বিশেষত, ওমর (রা.) এতটাই বিমূঢ় হয়ে পড়েন যে তিনি বলেছিলেন, “যে বলিবে হযরত মরিয়াছেন, তাহার মাথা যাইবে।” সাহাবিরা মুহম্মদ স-এর মৃত্যু মেনে নিতে পারছিলেন না, এবং শোকে তাদের মুখে কথা সরছিল না।

খ. হযরত মুহম্মদ স-এর মৃত্যু সংবাদে হযরত ওমর (রা.) এতটাই শোকগ্রস্ত হয়ে পড়েন যে তিনি এটি বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না। আবেগের বশে তিনি বলেন, “যে বলিবে হযরত মরিয়াছেন, তাহার মাথা যাইবে।” এটি তাঁর নবীপ্রেম এবং মুহম্মদ স-এর প্রতি গভীর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। তবে হযরত আবু বকর (রা.) সাহসের সঙ্গে সবাইকে বোঝান যে, নবী (স.) একজন মানুষ, এবং প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। তিনি কুরআনের আয়াত তেলাওয়াত করে সকলকে সান্ত্বনা দেন।

গ. উদ্দীপকের বিষয়বস্তু মহানবী (স.)-এর সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও আমানতের প্রতি বিশ্বস্ততা গুণের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। নবী মুহম্মদ স-এর উপাধিগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল আল-আমিন (বিশ্বস্ত) ও আস-সাদিক (সত্যবাদী)। তিনি ব্যবসায় সততা বজায় রাখতেন এবং কখনো কারও আমানতের খেয়ানত করতেন না। উদ্দীপকের রায়হান চরিত্রও কর্তব্যপরায়ণ, বিশ্বস্ত ও সততার প্রতিমূর্তি, যা মহানবী (স.)-এর চরিত্রের সঙ্গে মিল রাখে।

ঘ. সততা মানুষের জীবনে শ্রেষ্ঠতম গুণগুলোর একটি, যা তাকে মহিমান্বিত করে তোলে।

  • উদ্দীপকের আলোকে: রায়হান দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ার পরও লোভে পড়ে মালিকের সম্পদ আত্মসাৎ করেনি, বরং সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে ব্যবসার প্রসার ঘটিয়েছে। মালিক ফিরে এলে সে সৎভাবে সব ফেরত দিতে চেয়েছে। ফলে তার সততার পুরস্কার স্বরূপ মালিক তাকেই দায়িত্ব দিয়ে যান।
  • ‘মানুষ মুহম্মদ স’ প্রবন্ধের আলোকে: নবী মুহম্মদ স সততা ও বিশ্বস্ততার সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ব্যবসায়িক জীবনে তিনি কখনো প্রতারণা করেননি, বরং সৎ উপায়ে ব্যবসা করেছেন, যা তাঁকে ‘আল-আমিন’ উপাধিতে ভূষিত করে। এমনকি নবুয়তের পরও তিনি শত্রুদের আমানত রক্ষা করেছেন, যেমন—হিজরতের সময় হযরত আলী (রা.)-এর মাধ্যমে মক্কার কাফিরদের গচ্ছিত সম্পদ তাদের ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

সততা মানুষের ব্যক্তিত্বকে মহিমান্বিত করে এবং সমাজে তাকে শ্রদ্ধার আসনে অধিষ্ঠিত করে। নবী মুহম্মদ স-এর সততা ও আমানতদারিতা তাকে বিশ্বে সর্বশ্রেষ্ঠ মানবরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছে। একইভাবে, উদ্দীপকের রায়হানও সততার মাধ্যমে মালিকের আস্থা অর্জন করে এবং তার পুরস্কার লাভ করে।

মানুষ মুহম্মদ স সৃজনশীল প্রশ্ন ৩

কয়েক বছর আগের রাকিবের সাথে ভালোভাবে কথাও বলত না কেউ। কারণটা ছিল তার কুশ্রীদর্শন অবয়ব ও দারিদ্র্য। সে ছিল কালো ও বেঁটে। থ্যাবড়া নাক আর তোবড়ানো গালের কারণে চেহারাটা তার অদ্ভুতদর্শন। তবে এখন সে সকলের প্রিয় ‘রাকিব ভাই’।

মানুষের কল্যাণে জীবনকে উৎসর্গ করেছে রাকিব। এলাকার কেউ বিপদে পড়লে বা সাহায্য চাইলে যথাসাধ্য চেষ্টা করে সে। প্রথম প্রথম সবাই নানাভাবে বাধা দিলেও দমে যায়নি রাকিব। বরং পরম মমতায় শত্রু-মিত্র সবাইকে আপন করে নিয়েছে। হযরত মুহম্মদ স-এর আদর্শ অনুসরণ করে মানুষের ভালোবাসা পেতে চায় রাকিব।

প্রশ্ন:

 ক. মুহম্মদ স-এর মৃত্যুশয্যার পার্শ্বে শেষ পর্যন্ত কে ছিলেন?
খ. মুহম্মদ স-এর মৃত্যু সংবাদে মূর্ছিত মুসলমানদের চৈতন্য হয় কীভাবে? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের রাকিবের কোন বৈশিষ্ট্যটি ‘মানুষ মুহম্মদ স’ প্রবন্ধে বর্ণিত মুহম্মদ স-এর বৈশিষ্ট্যের সাথে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের শেষ বাক্যটির যৌক্তিকতা ‘মানুষ মুহম্মদ স’ রচনার আলোকে বিশ্লেষণ করো।

সমাধান:

ক. হযরত মুহম্মদ স-এর মৃত্যুশয্যার পাশে শেষ পর্যন্ত ছিলেন তাঁর প্রিয় সহধর্মিণী হযরত আয়েশা (রা.)। তিনি রাসুল (স.)-এর সেবা করছিলেন এবং তাঁর মাথা নিজের কোলে রেখে পানি দিয়ে সিক্ত কাপড় দিয়ে রাসুল (স.)-এর মুখমণ্ডল মুছিয়ে দিচ্ছিলেন।

খ. মুহম্মদ স-এর মৃত্যু সংবাদে অনেক মুসলমান গভীর শোকে মূর্ছিত হয়ে পড়েন। বিশেষ করে, হযরত ওমর (রা.) এতটাই বিমূঢ় হয়ে পড়েছিলেন যে, তিনি বলেছিলেন, “যে বলবে মুহম্মদ স মৃত্যুবরণ করেছেন, তার শিরচ্ছেদ করা হবে।”
তবে, হযরত আবু বকর (রা.) ধৈর্য ধরে মুসলমানদের চৈতন্য ফেরান। তিনি কুরআনের আয়াত পাঠ করেন—

“মুহাম্মদ তো একজন রসূল মাত্র, তাঁর পূর্বেও অনেক রসূল গত হয়েছেন। তাহলে কি তিনি যদি মারা যান অথবা নিহত হন, তবে তোমরা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে?” (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৪৪)

এই আয়াত শুনে সাহাবিরা বাস্তবতা উপলব্ধি করেন এবং ধৈর্য ধারণ করেন।

গ. উদ্দীপকের রাকিবের শারীরিক অবয়ব মুহম্মদ স-এর বৈশিষ্ট্যের সাথে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ। মুহম্মদ স ছিলেন সুদর্শন, দীর্ঘকায় ও ন্যায্য বর্ণের অধিকারী। তবে রাকিবের শারীরিক বৈশিষ্ট্য কুশ্রী হওয়া সত্ত্বেও তার নৈতিকতা ও মানবসেবার কারণে সমাজে সে সম্মান অর্জন করেছে।
যদিও শারীরিক গঠনে পার্থক্য রয়েছে, তাদের উভয়ের নৈতিক গুণাবলি এক ও অভিন্ন। মুহম্মদ স যেমন সকলের জন্য দয়ালু ও উদার ছিলেন, রাকিবও তেমনই মানুষের কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করেছে।

ঘ. “হযরত মুহম্মদ স-এর আদর্শ অনুসরণ করে মানুষের ভালোবাসা পেতে চায় রাকিব।”—এই বক্তব্য সম্পূর্ণ যৌক্তিক

  • মুহম্মদ স ছিলেন সকলের প্রিয়। প্রথম জীবনে তাঁকে অবহেলা করা হলেও তাঁর উদারতা, দয়া ও মানবসেবা মানুষকে আকৃষ্ট করে।
  • রাকিবও প্রথমে অবজ্ঞার শিকার হয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীতে মানুষের উপকার করে সকলের প্রিয় হয়ে ওঠে
  • মুহম্মদ স তাঁর শত্রুদেরও ক্ষমা করতেন এবং ভালোবাসার মাধ্যমে সকলকে আপন করে নিতেন। রাকিবও একইভাবে শত্রু-মিত্র নির্বিশেষে সবার উপকার করে যাচ্ছে।

সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা ও ভালোবাসা অর্জনের জন্য শারীরিক সৌন্দর্য নয়, বরং সততা, মানবতা, সহমর্মিতা ও সেবার মনোভাব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নবী মুহম্মদ স-এর মতো আদর্শ অনুসরণ করলেই প্রকৃতভাবে মানুষের ভালোবাসা পাওয়া সম্ভব, যা রাকিবের চরিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।

মানুষ মুহম্মদ স সৃজনশীল প্রশ্ন ৪

হাকিম সাহেব বারবার নির্বাচিত একজন নামকরা চেয়ারম্যান। নির্বাচনের সময় তার জনপ্রিয়তা দেখে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তার নামে নানান মিথ্যাচার করতে থাকে। এমনকি তার নামে একটি মিথ্যা দুর্নীতির মামলাও দায়ের করে। এতকিছুর পরেও তিনি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে বিরোধীদের ক্ষমা করে দেন এবং সকলকে নিয়ে একসাথে কাজ করার ঘোষণা দেন।

প্রশ্ন:

 ক. হযরত মুহম্মদ স-এর মাজার কোথায়?
খ. “আমি রাজা নই, সম্রাট নই, মানুষের প্রভু নই”—কথাটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকে ‘মানুষ মুহম্মদ স’ প্রবন্ধের কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘মানুষ মুহম্মদ স’ প্রবন্ধের একটি বিশেষ দিকের প্রতিফলন মাত্র”—বিশ্লেষণ করো।

সমাধান:

ক. হযরত মুহম্মদ স-এর মাজার সৌদি আরবের মদিনা শহরের মসজিদে নববী-তে অবস্থিত। এটি হযরত মুহম্মদ স-এর কবরস্থল, যেখানে মুসলিমরা তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে যান।

খ. “আমি রাজা নই, সম্রাট নই, মানুষের প্রভু নই”—এই কথাটি দ্বারা হযরত মুহম্মদ স তাঁর নিজেকে একেবারে সাধারণ মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন, যা তাঁর নম্রতাআদর্শের সহজতা প্রকাশ করে। তাঁর মতে, তিনি কোনো শাসক বা কর্তৃত্বের অধিকারী নন, বরং তিনি মানুষদের জন্য একটি দয়ালু পথপ্রদর্শক ছিলেন। তিনি ঈশ্বরের বান্দা, যিনি মানবতার সেবা করেছেন এবং সব মানুষকে সমানভাবে ভালবাসতেন।

গ. উদ্দীপকে ‘মানুষ মুহম্মদ স’ প্রবন্ধের যে দিকটি ফুটে উঠেছে তা হলো ক্ষমাশীলতা এবং মানবিক গুণাবলী
হাকিম সাহেব যেমন নির্বাচনে মিথ্যাচার ও অপবাদ সত্ত্বেও বিরোধীদের ক্ষমা করে দিয়ে সকলের সাথে কাজ করার ঘোষণা দেন, তেমনই হযরত মুহম্মদ স তাঁর শত্রুদেরও ক্ষমা করে দিয়েছিলেন এবং প্রতিহিংসা নয়, শান্তি ও সমাধানের পথে আগাতে পছন্দ করেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, মক্কা বিজয়ের দিন তিনি তার শত্রুদের ক্ষমা করে দিয়ে বলেন, “আজ আমি তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিশোধ নেব না।”
এই বিষয়টি ক্ষমাশীলতা, উদারতা ও শান্তির পথে চলা—হযরত মুহম্মদ স-এর গুণাবলিরই প্রতিফলন।

ঘ. “উদ্দীপকটি ‘মানুষ মুহম্মদ স’ প্রবন্ধের একটি বিশেষ দিকের প্রতিফলন মাত্র”—এই বক্তব্যটি সঠিক, কারণ উদ্দীপকে ক্ষমাশীলতা এবং শত্রুদের প্রতি উদার মনোভাব ফুটে উঠেছে। হাকিম সাহেবের আচরণ নবী মুহম্মদ স-এর জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ গুণের সাথে মিলে যায়, যা হলো ক্ষমা এবং মনুষ্যত্বের প্রতি আস্থা। মুহম্মদ স-এর জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে তিনি শত্রুদের ক্ষমা করেছেন, এবং সকলের প্রতি একসাথে কাজ করার জন্য প্রস্তুত হয়েছেন। এই একই গুণ উদ্দীপকের হাকিম সাহেবের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে।

ক্ষমাশীলতা, নম্রতা ও মানবিক মূল্যবোধের এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন নবী মুহম্মদ স। হাকিম সাহেবও তার উদারতা ও ক্ষমাশীলতার মাধ্যমে সমাজের জন্য এক আদর্শ স্থাপন করেছেন, যা ‘মানুষ মুহম্মদ স’ প্রবন্ধের মূল সুরের সাথে মিলে যায়।

শেষ কথা

মুহম্মদ স ছিলেন এক মহান ব্যক্তিত্ব, যাঁর জীবন ও শিক্ষা আজও মানবতার পথপ্রদর্শক। তাঁর প্রতি সম্মান, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা আমাদের একে অপরের প্রতি সদ্ভাব ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত হতে সহায়তা করে। মুহম্মদ স এর জীবন আমাদের একটি সুস্থ, দয়ালু এবং ন্যায়পরায়ণ সমাজ গড়তে অনুপ্রেরণা দেয়।

মানুষ মুহম্মদ স সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তরের মাধ্যমে মুহম্মদ স এর জীবন ও শিক্ষা আরও বিস্তারিতভাবে জানার চেষ্টা করুন এবং মানবিক মূল্যবোধের দিকে নজর দিন।

Leave a Comment