রমজান মাস নিয়ে কিছু কথা। রমজান নিয়ে উক্তি

রমজান মাস হল সেই সময়, যখন মুসলিমদের জীবন একটু ধীরগতির হয়ে যায়, কিন্তু হৃদয় ভরে ওঠে আধ্যাত্মিকতা আর সংযমে। এই মাসটি শুধু খাবার ও পানীয় থেকে বিরত থাকার মাস নয়, বরং নিজেকে শুদ্ধ করার, ধৈর্য শেখার, এবং আল্লাহর আরও কাছাকাছি যাওয়ার এক সুন্দর সুযোগ।

এই মাসে ভোরবেলা সেহরি খেয়ে রোজা রাখা হয়, তারপর সারাদিন না খেয়ে, না পান করে ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয় তবে সূর্য ডোবার পর ইফতারের সময় যখন প্রথম পানির ফোঁটা মুখে লাগে, তখন যে প্রশান্তি আসে, তা সত্যিই অন্যরকম।

রমজান মাস মানে শুধু না খাওয়া নয়—এটি মনের, আত্মার, এবং আচরণের পরিশুদ্ধির সময়। রাগ কমানো, ভালো কাজ করা, দরিদ্রদের সাহায্য করা থেকে শুরু করে বেশি বেশি ইবাদত করাই এই মাসের মূল শিক্ষা। আর এই পুরো মাসের সবচেয়ে মহিমান্বিত রাত হল “লাইলাতুল কদর” যা হাজার রাতের চেয়েও উত্তম।

অবশেষে, এক মাস সংযম পালনের পর আসে ঈদুল ফিতর—একটি খুশির দিন। যেখানে পরিবার-পরিজন মিলে আনন্দ উদযাপন করা হয়, নতুন পোশাক পরা হয়, মিষ্টি খাওয়া হয়।

আর সবচেয়ে বড় বিষয়, একে অপরের প্রতি ভালোবাসা ও উদারতা প্রকাশ করা হয়।

রমজান মাস নিয়ে কিছু কথা।

রমজান মাস আমাদের কী শেখায়? চলুন কিছু বাস্তব জীবনের উদাহরণ জেনে নেই—

১. রমজান আমাদের সংযম শেখায়।

সারাদিন না খেয়ে থাকার মানে শুধুমাত্র ক্ষুধা সহ্য করা নয়, বরং রাগ, হিংসা, গসিপ—এসব থেকে নিজেকে দূরে রাখা। এমনকি যদি কেউ ঝগড়া করতে চায়, তখনও হাসিমুখে বলা: “আমি রোজা আছি!”

২. এটা আত্মশুদ্ধির মাস।

রমজানে আমরা চেষ্টা করি বেশি ইবাদত করতে, দোয়া করতে, গুনাহ থেকে দূরে থাকতে যেন এক মাস পর আমরা আগের চেয়ে আরও ভালো মানুষ হয়ে উঠতে পারি।

৩. ক্ষুধার্তদের কষ্ট বোঝার সুযোগ দেয়।

সারাদিন না খেয়ে থাকলে বোঝা যায়, যাদের প্রতিদিন কিছু খাওয়ার নিশ্চয়তা নেই। তারা কীভাবে বেঁচে থাকে। এই উপলব্ধি আমাদের আরও সহানুভূতিশীল বানায়।

৪. ধৈর্য শিখিয়ে দেয়।

তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে গেলেও ইফতারের আগ পর্যন্ত ধৈর্য ধরতে হয়। এটি আমাদের শেখায়, জীবনের কঠিন সময়েও ধৈর্য ধরলে ভালো দিন আসবেই।

৫. নিয়ম-শৃঙ্খলার অভ্যাস গড়ে তোলে।

রমজানে আমাদের জীবন একটা সুন্দর রুটিনে চলে আসে। যেমন সঠিক সময়ে ঘুম, সেহরি, নামাজ, কাজ, ইফতার যা সারা বছর ধরে রাখলে জীবন আরও সুন্দর হতে পারে।

৬. গুনাহ থেকে দূরে থাকার অনুপ্রেরণা দেয়।

রমজানে আমরা চেষ্টা করি গসিপ, মিথ্যা বলা, খারাপ ব্যবহার থেকে দূরে থাকতে। কিন্তু শুধু এক মাসের জন্য কেন? এটা যদি সবসময় করতে পারতাম, জীবন কত সুন্দর হতো!

৭. দানশীলতার অনুভূতি জাগিয়ে তোলে।

রমজানে অনেকেই গরিবদের ইফতার দেয়, জামা-কাপড় দেয়, টাকা দান করে। কারণ, এই দান শুধু অন্যের উপকারই করে না, বরং আমাদের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে।

৮. এটা কুরআনের মাস।

এই মাসেই কুরআন নাজিল হয়েছিল। আমরা চেষ্টা করি বেশি বেশি কুরআন পড়তে, তার অর্থ বুঝতে এবং আমাদের জীবনে তা কাজে লাগাতে।

৯. লাইলাতুল কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ।

রমজানের শেষ দশকের একটা রাত আছে। যেটা এত বরকতময় যে, এতে করা ইবাদত ৮৩ বছরের ইবাদতের সমান। তাই সবাই এই রাতে বেশি বেশি দোয়া করার চেষ্টা করে।

১০. সুস্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

সারা দিন না খেয়ে থাকার ফলে আমাদের শরীর ডিটক্স হয়, হজমের সমস্যা কমে, স্বাস্থ্য ভালো হয়। অর্থাৎ, রোজা শুধু আত্মার জন্য নয়, শরীরের জন্যও ভালো।

১১.পরিবারের বন্ধন আরও গভীর করে।

রমজানে সেহরি-ইফতারের জন্য সবাই একসঙ্গে বসে, মজার ভিন্ন ভিন্ন খাবার বানায়, একসঙ্গে নামাজ পড়ে—যা সম্পর্কগুলোকে আরও মজবুত করে।

১২. আল্লাহর বিশেষ রহমত লাভের সুযোগ দেয়।

রমজানের প্রথম ১০ দিন রহমতের, মাঝের ১০ দিন গুনাহ মাফের, আর শেষ ১০ দিন জাহান্নাম থেকে মুক্তির। অর্থাৎ, এটা এমন একটা সময় যখন চাইলেই নিজের জীবন বদলে ফেলা যায়।

১৩. রোজা আত্মনিয়ন্ত্রণের শিক্ষা দেয়।

যতই ক্ষুধা লাগুক, ইফতার পর্যন্ত ধৈর্য ধরতে হয় যা আমাদেরকে শেখায়, জীবনের কঠিন মুহূর্তেও ইচ্ছাকে সংযত রাখা যায়।

১৪. ইফতারের সময় দোয়া কবুল হয়।

ইফতারের আগের মুহূর্তটা দোয়া কবুলের সময়। তাই আমরা চুপচাপ বসে দোয়া করি। নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, সবার জন্য।

১৫. রমজানের শিক্ষা সারা জীবন কাজে লাগানো উচিত।

রমজান চলে গেলে অনেকেই পুরনো জীবনে ফিরে যায়। তবে যদি এই এক মাসের ধৈর্য, সংযম, দানশীলতা আর ইবাদতের অভ্যাস সারা বছর চালিয়ে যেতে পারি, তাহলে জীবন সত্যিই বদলে যাবে।

 

রমজান নিয়ে সুন্দর উক্তি

রমজান মাস নিয়ে কিছু সুন্দর উক্তি  দেওয়া হলো,

১. “রমজান সংযম ও আত্মশুদ্ধির মাস, এটি কেবল উপবাস নয়, বরং আত্মার পরিশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম।”

২. “সিয়াম কেবল ক্ষুধা ও তৃষ্ণা সহ্য করা নয়, এটি মনের সকল অসৎ চিন্তা ও খারাপ অভ্যাস থেকে মুক্ত থাকার এক অনন্য অনুশীলন।”

৩. “রমজান আত্মসংযমের মাস, যেখানে একজন মুসলিম তার ইচ্ছাশক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করা শেখে এবং আল্লাহর রহমত লাভ করে।”

৪. “রমজান কেবল রোজা রাখার জন্য নয়, বরং এটি ধৈর্য, সহানুভূতি ও মানবতার শিক্ষা দেয়।”

৫. “রমজান আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে, হৃদয়কে প্রশান্ত করে, আর তাকওয়া বৃদ্ধি করে।”

রমজান শুধু একটা সময় নয়, এটা একটা শিক্ষা—নিজেকে আরও ভালো মানুষ বানানোর। যদি আমরা সত্যিই এই শিক্ষা হৃদয়ে ধারণ করতে পারি, তবে শুধু এক মাস নয়, আমাদের পুরো জীবনই সুন্দর হয়ে উঠবে।

Leave a Comment