স্কুলের প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা।স্কুলের প্রথম দিনের অনুভূতি নিয়ে দিনলিপি

স্কুলের প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা।স্কুলের প্রথম দিনের অনুভূতি নিয়ে দিনলিপি খুঁজছেন?

স্কুলের প্রথম দিন আমাদের জীবনের একটি বিশেষ মুহূর্ত। নতুন পরিবেশ, নতুন সহপাঠী, এবং নতুন শিক্ষক-শিক্ষিকার সাথে পরিচিত হওয়ার অনুভূতি একেবারেই আলাদা। প্রথম দিনটা সাধারণত এক ধরনের অদ্ভুত অনুভূতির মধ্যে কাটে—ভয়, উত্তেজনা, আশা আর কৌতূহল মিলিয়ে একটি মিশ্র অনুভূতি তৈরি হয়। নতুন ক্লাসরুম, নতুন বই, আর পরিচিত না হওয়া বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো প্রথম দিনটা কখনও ভোলার মতো নয়। 

এই দিনটা আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা হিসেবে থেকে যায়, যেটা আমাদের পরবর্তী সব স্কুল জীবনের স্মৃতি তৈরি করতে সহায়ক হয়। প্রথম দিনের অনুভূতির মাধ্যমে শুরু হয় শিক্ষার নতুন অধ্যায়। আজ আমি আপনাদেরকে আমার স্কুল জীবনের প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা জানাবো। কারণ পরীক্ষায় স্কুলের প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা।স্কুলের প্রথম দিনের অনুভূতি নিয়ে দিনলিপি আসে। তাই চলুন শুরু করা যাক-

স্কুলের প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা।স্কুলের প্রথম দিনের অনুভূতি নিয়ে দিনলিপি

আমাদের স্কুল জীবনের প্রথম দিন আমরা কেউ ভুলতে পারিনা। কারণ এটা আমাদের জীবনের একটি স্মরণীয় দিন। আমাদের স্কুল জীবনের প্রথম দিনটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একদম নতুন পরিবেশ, নতুন মানুষ, নতুন সবকিছু আমাদের জীবনে এক অজানা অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে। ছোট জীবনের এই নতুন অধ্যায়ের শুরুতে যেমন উৎসাহ কাজ করে তেমন ভয়ও মিশে থাকে। আজকে আমি আমার স্কুল জীবনের প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে যাচ্ছি। সবার মত আমিও খুব উৎসাহিত ছিলাম আবার ভয় পাচ্ছিলাম। কারণ সব নতুন মানুষ আবার নতুন পরিবেশ। বুঝতে পারছিলাম না আমার স্কুল জীবনের প্রথম দিনটা আমার কেমন যাবে।

স্কুলের প্রথম দিন আমার কাছে মনে হয়েছিল একেবারে নতুন পৃথিবীতে প্রবেশ করা। বাড়ি, মা-বাবার স্নেহ, সবকিছু ছেড়ে, আমি যাচ্ছি এক নতুন জায়গায় যেখানে আমাকে অনেক কিছু শিখতে হবে। মনে হচ্ছিল, কী হবে? কীভাবে চলবে সব কিছু? এসব চিন্তা মনে ঘুরছিল। আর বাবা-মায়ের মুখে সেই সতর্ক বাণী—“ভালো থাকতে হবে, পড়াশোনা করবে, বন্ধুর সাথে মজা করবে”—এগুলোও ভাবনা বাড়িয়ে দিচ্ছিল।

প্রথম দিনের সকালে মা আমাকে খুব যত্ন করে রেডি করে দিলেন। নতুন ইউনিফর্ম, বই-খাতা, টিফিন বক্স সব কিছু রেডি করে আমার ব্যাগে ঢুকিয়ে দিল। আমার মনে হচ্ছিল আজকে যেন আমার জীবনের অনেক বড় একটা পরীক্ষা।

মা-বাবা যখন আমাকে স্কুলে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন আমার পা চলছিল না। মনে হচ্ছিল, আমি যেন এই পরিবেশে কিছুতেই মানিয়ে নিতে পারব না। কিন্তু মা বলেছিলেন, ” সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।” বাবা বললেন, ” স্কুলে  যাওয়ার পর আমরা তো তোর জন্য অপেক্ষা করব।”

স্কুলে পৌঁছানোর পর, আমি চোখ বড় বড় করে চারপাশ দেখছিলাম। বড় বড় বিল্ডিং, রঙিন দেয়াল, সবার মাঝে আমি অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আমার সমান ছোট ছোট বাচ্চারা হাসাহাসি করছিল খেলাধুলা করছিল। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দেখে আমি অনেক ভয় পেয়েছিলাম। আমার মনে হতো আমার ক্লাসের শিক্ষক শিক্ষিকারা অনেক বেশি কঠোর। তাদের চোখ দেখলেই আমি ভয় পেতাম। আমি ভাবছিলাম কিভাবে আমি এই নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেব। ক্লাসে প্রবেশ করা মাত্রই সব নতুন মুখ দেখলাম। 

সবাইকে আমার বন্ধুদের সাথে বসে গল্প করছিল হাসাহাসি করছি। তাদের মাঝে আমি একেবারেই নতুন। সবার অপরিচিত। আমি ক্লাসে প্রবেশ করা মাত্রই সবাই আমার দিকে তাকালো। আমার মনে হচ্ছিল আমি একেবারে একা।  তারপরে আমার ক্লাসের শিক্ষক আমাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। আমি একটি বেঞ্চে গিয়ে বসলাম। আমার পাশে বসা ছেলেটি নিজে থেকেই আমার সাথে পরিচিত হলো। আমার সাথে কথা বলতে শুরু করলো। তারপর একটু একটু করে সবার সাথেই আমার কথা হল। বন্ধুত্ব হয়ে গেল। আমার ভয় আস্তে আস্তে কাটতে শুরু করলো। আমিও সবার সাথেই মিশে গেলাম।

আমার প্রথম ক্লাসের শিক্ষকও  ভালো এবং মিশুক একজন মানুষ। আমি যাতে অস্বস্তি বোধ না করি তাই সে বারবার এসে আমার সাথে কথা বলছিল। এমনকি ক্লাসে সবাইকে বলেছিল সবাই যেন আমাকে ক্লাসের রুটিন এবং যাবতীয় সকল বিষয়ে সাহায্য করে। এভাবে খুব আনন্দের সাথেই আমার প্রথম ক্লাস শেষ হলো। দ্বিতীয় ক্লাসে একজন শিক্ষিকা ক্লাসে প্রবেশ করলেন। তিনি দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি আচরণও মুগ্ধ করার মত। আমাকে দেখামাত্রই তিনি আমার সাথে পরিচিত হলেন। এবং ক্লাসের সবাইকে বলেন সবাই যেন আমার সাথে খুব ভালো আচরণ করে। আস্তে আস্তে আমার অস্বস্তি পুরোটাই কেটে গেল। 

 

এরপর টিফিন টাইমে সবাই যখন ক্যান্টিনে খেতে যাচ্ছিল আমাকেও সাথে করে নিয়ে গেল। প্রথম দিন হওয়ার কারণে আমি একটু লজ্জা পাচ্ছিলাম। কিন্তু দেখলাম সবাই সবার সাথে খুব মজা করে খাওয়া দাওয়া করছে। এমনকি সবাই সবার খাবার শেয়ার করছে। আমার মা আজকে আমার টিফিনে আলু ভাজি, পরোটা আর ডিমের অমলেট দিয়েছিল। আমিও সেটা আমার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করি। এভাবে আমাদের বন্ধুত্বটা আরো গভীর হতে থাকে। আমার ক্লাসের নিবিড় নামের একটি ছেলে আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু হয়ে ওঠে। ওর কাছ থেকে আমি স্কুলের ব্যাপারে আরো জানতে পারি। 

কোন শিক্ষক কঠোর, পরীক্ষায় কিভাবে প্রশ্ন আসে সবকিছুই সে আমাকে জানায়। এমনকি তার বাসাও আমার বাসা থেকে খুব কাছে। আমরা ঠিক করি প্রতিদিন বিকালে খেলার মাঠে গিয়ে আমরা দেখা করব। টিফিন খাওয়া শেষে আমি আবারো ক্লাসে ফিরে যাই। টিফিনের পরে আমার আরো দুইটি ক্লাস হয়। বাকি ক্লাসের শিক্ষক শিক্ষিকারাও খুবই আন্তরিক ছিল। আমাকে মোটেও অস্বস্তিতে পড়তে হয়নি। আমি খুব আনন্দের সাথে স্কুলের প্রথম দিন কাটালাম। স্কুল শেষ করে ফিরে আসার পর আমার বাবা-মা আমার প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা জানতে চাইলো। আমি তাদেরকে জানালাম। আর এভাবে আমার প্রথম দিনের শেষ হলো।

পরিশেষে

স্কুলের প্রথম দিনটি যে এতটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে, তা আমি কখনো ভাবিনি। নতুন পরিবেশে, নতুন বন্ধুদের মাঝে নিজেকে খুঁজে পাওয়া, নতুন কিছু শিখতে শুরু করা—এই সবকিছু মিলিয়ে স্কুলের প্রথম দিনটি আমার জীবনের একটি অমূল্য অভিজ্ঞতা হয়ে রইল। সেই প্রথম দিনটি মনে করে আমি বলতেই পারি, “এটা আমার জীবনের প্রথম বড় যাত্রা, যে যাত্রা আমাকে নতুন কিছু শিখতে সাহায্য করেছে।”

প্রথম দিনটি ছিল অনেকটাই উদ্বেগ এবং আনন্দের মিশ্রণ, তবে পরবর্তীতে, আমি বুঝতে পেরেছিলাম, জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত নতুন কিছু শেখার সুযোগ পাওয়া যায়।

Read More: ২১ শে ফেব্রুয়ারি অনুচ্ছেদ। ২১ শে ফেব্রুয়ারি রচনা

Leave a Comment