সেকেন্দার দেওয়ান বাংলা সাহিত্যের বিশেষত মৈমনসিংহ গীতিকার অন্তর্গত ‘আলাল ও দুলাল’ কাব্যের একটি প্রধান চরিত্র। তিনি ‘আলাল ও দুলাল’ কাহিনির সঙ্গে জড়িত একজন শক্তিশালী ও ন্যায়পরায়ণ শাসক। তার চরিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তিনি একজন দানশীল, সাহসী ও ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি, সেকেন্দার দেওয়ান এমন এক চরিত্র যেমনভাবে তিনি তার অধীনস্তদের প্রতি দয়ালু, ঠিক তেমনভাবেই অন্যায়ের বিরুদ্ধেও কঠোর ছিলেন ৷
সেকেন্দার দেওয়ানের পরিচয়:
সেকেন্দার দেওয়ান ধনুক নদীর পাড়ে অবস্থিত বারো জঙ্গল ও তেরো ভূমিখণ্ডের অধিপতি ছিলেন। তার বিশাল সাম্রাজ্য ছিলোএবং তার অনেক সৈন্য ও কর্মচারী ছিলো ৷ যেকোনো বিপদে তিনি তার সৈন্য ও কর্মচারীদের সাহায্য করতেন ৷
তার দুটি কন্যা ছিলো ৷ তার কন্যাদের নাম হলো মমিনা ও আমিনা। তিনি একজন ভালো পিতা ছিলেন এবং তার কন্যাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত ছিলেন।
সেকেন্দার দেওয়ানের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য:
সেকেন্দার দেওয়ান ছিলেন অত্যন্ত দানশীল ৷ তিনি সবসময় অভাবী ও অসহায়দের সাহায্য করতেন ৷ যেকোনো বিপদে-আপদে অসহায়দের পাশে দাঁড়াতেন ৷ তিনি অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণ একজন মানুষ ছিলেন ৷ যেকোনো পরিস্থিতিতে তিনি সঠিক বিচার করতেন ৷ ন্যায় প্রতিষ্ঠায় তিনি অগ্রনী ভূমিকা পালন করতেন ৷ এছাড়াও সেকান্দার দেওয়ান শিকারে দক্ষ ছিলেন ৷ শিকারের সময় যে কোন বিপদের সম্মুখীন হলে অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে পরিস্থিতির মোকাবেলা করতেন ৷
আলাল ও দুলালের সঙ্গে সেকেন্দার দেওয়ানের সম্পর্ক:
একদিন সেকেন্দার দেওয়ান শিকারে গিয়ে আলাল নামের এক তরুণকে দেখতে পান, সে তখন নিঃস্ব অবস্থায় ছিল। তাকে এ অবস্থায় দেখে সেকেন্দার দেওয়ান এর অনেক দয়া হয় ৷ তিনি তখন আলালকে তার বাড়িতে নিয়ে আসেন এবং স্নেহের সাথে লালন-পালন করেন। আলাল নিজের পরিচয় লুকিয়ে দেওয়ানের বাড়িতে কাজ করতে শুরু করে ৷ কিন্তু কাজ করলেও সে কোন পারিশ্রমিক নিতো না ৷ দেওয়ান তাকে ভালোবাসতেন এবং তার প্রতি আস্থাশীল ছিলেন।
একপর্যায়ে, আলালের প্রকৃত পরিচয় প্রকাশ পেলে, তিনি তাকে তার অধিকার প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন। আলালের পৈতৃক সম্পত্তি পুনরুদ্ধারে সেকেন্দার দেওয়ান পাঁচশত কাজের লোক ও দুইশত সৈন্য প্রেরণ করেন। যখন আলাল তার নিজ রাজ্য পুনরুদ্ধার করে, তখন সেকেন্দার দেওয়ান তার দুই কন্যাকে আলাল ও দুলালের সঙ্গে বিবাহ দেন।
শেষ কথা
সেকেন্দার দেওয়ান ‘আলাল ও দুলাল’ কাহিনির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র, যিনি কেবল একজন জমিদার বা শাসক নন, বরং একজন আদর্শ ন্যায়পরায়ণ মানুষ। সেকেন্দার দেওয়ান শুধুমাত্র এক জনপদের শাসক ছিলেন না, তিনি ছিলেন ন্যায়ের প্রতীক। তার চরিত্রের মধ্যে দানশীলতা, নৈতিকতা ও সহানুভূতির সংমিশ্রণ দেখা যায়। তিনি সাহিত্যে একজন আদর্শ শাসক ও অভিভাবকের প্রতিচ্ছবি হিসেবে স্থান পেয়েছেন। তার চরিত্রের মধ্য দিয়ে মধ্যযুগীয় বাংলার শাসকদের নৈতিক আদর্শের প্রতিফলন ঘটে। তিনি সাহিত্যে এক স্মরণীয় চরিত্র হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।