লালসালু উপন্যাসটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রখ্যাত লেখক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ’র রচিত একটি সৃষ্টিশীল সাহিত্যকর্ম, যা মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে তার গভীর ভাবনা এবং সামাজিক সমস্যাগুলির চিত্রায়ণের জন্য। এই উপন্যাসটি আধুনিক বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এটি বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাপী পাঠকদের কাছে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত।
এটি এমন একটি উপন্যাস যেখানে চরিত্রের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, সামাজিক চ্যালেঞ্জ, এবং মানবিক মূল্যবোধের জটিলতা তুলে ধরা হয়েছে। উপন্যাসটি বিভিন্ন ধরনের সামাজিক এবং ব্যক্তিগত সংগ্রাম, সম্পর্ক, এবং জীবনের কঠিন বাস্তবতার সাথে সম্পর্কিত। এই কারণেই শিক্ষার্থীরা লালসালু উপন্যাসের বিভিন্ন প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ দেখায়, বিশেষত সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর প্রস্তুতির জন্য।
লালসালু উপন্যাসের সেরা ৪টি সৃজনশীল প্রশ্ন। লালসালু উপন্যাসের প্রশ্ন ও উত্তর
লালসালু উপন্যাসের সেরা সৃজনশীল প্রশ্ন এবং তার উত্তর করার মাধ্যমে আপনি আপনার সাহিত্যিক বিশ্লেষণ ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করতে পারেন। এখানে এমন কিছু সৃজনশীল প্রশ্ন আলোচনা করা হবে যা আপনার পরীক্ষার প্রস্তুতি এবং সাহিত্যিক মূল্যায়নে সাহায্য করবে।
সৃজনশীল প্রশ্ন ১
সুমনা গ্রামের এক প্রাণচঞ্চল মেয়ে। বন্ধুদের সঙ্গে দৌড়াদৌড়ি করা, নদীতে সাঁতার কাটা—এসবই তার আনন্দের উৎস। কিন্তু দারিদ্র্যের কারণে তার বাবা তাকে পাশের গ্রামের এক বৃদ্ধ ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেন। লোকটি গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তি, সবাই তাকে রশিদ মাস্টার বলে ডাকে। গ্রামবাসীরা তার প্রতি বেশ শ্রদ্ধাশীল হলেও চঞ্চল ও স্বাধীনচেতা সুমনা তার বিধিনিষেধ মেনে নিতে পারে না।
প্রশ্ন:
ক. রহিম চাচা কেমন ধরনের মানুষ ছিলেন?
খ. ‘ধীরে ঘূর্ণায়মান কুয়াশাচ্ছন্ন বাতাসের দিকে চেয়ে সে নিথর হয়ে বসে থাকে’—বাক্যটির অর্থ কী? গ. সুমনা ‘লালসালু’ উপন্যাসের জমিলার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ—ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের রশিদ মাস্টার ‘লালসালু’ উপন্যাসের মজিদ চরিত্রের সামগ্রিক বৈশিষ্ট্য ধারণ করেনি—মূল্যায়ন কর।
উত্তর:
ক. রহিম চাচা কেমন ধরনের মানুষ ছিলেন?
রহিম চাচা ছিলেন সুমনার পরিবারের একজন সাহায্যকারী, যিনি গরিবি ও দারিদ্র্যের জন্য অনেক কষ্ট পেয়েছিলেন। তিনি সাধারণ, সহজ-সরল এবং সুমনার পরিবারের জন্য সহানুভূতিশীল ছিলেন। সুমনা যখন নিজের সমস্যায় পড়েছিল, তখন রহিম চাচা তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছিলেন।
খ. ‘ধীরে ঘূর্ণায়মান কুয়াশাচ্ছন্ন বাতাসের দিকে চেয়ে সে নিথর হয়ে বসে থাকে’—বাক্যটির অর্থ কী?
এই বাক্যটি সুমনার মানসিক অবস্থা এবং তার একঘেয়ে জীবনের প্রতিফলন। কুয়াশাচ্ছন্ন বাতাসের দিকে তাকিয়ে থাকার মাধ্যমে সুমনা তার অন্তরের অস্থিরতা এবং হতাশার অনুভূতি প্রকাশ করছে। ‘নিথর হয়ে বসে থাকা’ তার জীবনযুদ্ধে অক্ষমতা বা আপাতভাবে একপ্রাজ পরাজয়ের চিত্র।
গ. সুমনা ‘লালসালু’ উপন্যাসের জমিলার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ—ব্যাখ্যা কর।
সুমনা এবং জমিলা দুটি চরিত্রই নিজেদের জীবনে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছে। সুমনা, যিনি এক চঞ্চল ও স্বাধীনচেতা মেয়ে ছিলেন, তার জীবনের বড় প্রতিবন্ধকতা ছিল সমাজের নানা বিধিনিষেধ। সে তার বাবা-মায়ের বাধ্যবাধকতার মধ্যে, বিশেষত তার বিয়ে নিয়ে, নিজের স্বাধীনতার অধিকার হারাতে বসেছিল। জমিলাও একইভাবে, তার নিজস্ব জীবনযাত্রার জন্য সংগ্রাম করেছিল। যদিও তাদের পরিস্থিতি ভিন্ন ছিল, তবে উভয়ের মধ্যেই স্বাধীনতার প্রতি আকাঙ্ক্ষা ছিল। জমিলা তার জীবনে বিভিন্ন বাধা সত্ত্বেও নিজের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল, ঠিক সুমনার মতো। তাদের জীবনে অভ্যন্তরীণ সংগ্রামের মূল বিষয় ছিল, সমাজ ও পরিবার থেকে স্বাধীনতা পাওয়া।
এভাবে, সুমনা এবং জমিলার মধ্যে কিছু সাদৃশ্য রয়েছে। তারা দুজনেই আত্মসম্মান এবং স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সংগ্রাম করেছে এবং কিছু অংশে তারা একে অপরের মতোই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিল।
ঘ. উদ্দীপকের রশিদ মাস্টার ‘লালসালু’ উপন্যাসের মজিদ চরিত্রের সামগ্রিক বৈশিষ্ট্য ধারণ করেনি—মূল্যায়ন কর।
রশিদ মাস্টার এবং মজিদ চরিত্র দুটি একে অপরের থেকে মৌলিকভাবে আলাদা। রশিদ মাস্টার ছিলেন একজন প্রভাবশালী, বয়সী ব্যক্তি, যিনি শক্তিশালী অবস্থানে ছিলেন এবং তার শাসনব্যবস্থায় সমাজের মূল্যবোধ ও তার নিজের মতামতকে প্রধান্য দিতেন। তিনি সুমনাকে তার জীবন ও স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করেছিলেন এবং তাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে একটি বিয়েতে বাধ্য করেছিলেন। তার চরিত্রটি এক ধরনের স্বৈরাচারের পরিচায়ক, যেখানে তিনি নিজেকে সমাজের শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
অন্যদিকে, মজিদ ছিল এক সাধারণ, নৈতিক ও মানবিক চরিত্র, যার মধ্যে সমাজের শাসন ও নিষেধের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের শক্তি ছিল না। মজিদ একজন আদর্শিক যুবক, যিনি প্রেম এবং নৈতিকতার দিক থেকে তার সিদ্ধান্ত নিয়ে জীবন যাপন করেছিলেন। তার মধ্যে কোনো ধরনের স্বৈরাচারী মনোভাব ছিল না এবং সে সমাজের রীতিনীতি বা শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহস দেখিয়েছে।
তাহলে, রশিদ মাস্টার এবং মজিদ চরিত্রের মধ্যে পার্থক্য হলো তাদের নৈতিকতা, ব্যক্তিত্ব এবং সমাজের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি। রশিদ মাস্টার যেখানে শাসক ও স্বৈরাচারী চরিত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত, মজিদ তার আদর্শিক ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে জীবনের পথে এগিয়ে গেছেন। ফলে, রশিদ মাস্টার মজিদের সামগ্রিক বৈশিষ্ট্য ধারণ করেনি।
সৃজনশীল প্রশ্ন ২
রফিকুল ইসলামের কোনো নির্দিষ্ট পেশা ছিল না। তার বাবা কামাল উদ্দিন ছিলেন একজন দিনমজুর। ছেলেকে উচ্চশিক্ষিত করার স্বপ্নে তিনি শহরে পাঠান। কিন্তু শহরে গিয়ে রফিকুল পড়ালেখা ছেড়ে রাজনৈতিক মতাদর্শে জড়িয়ে পড়ে। কথায় কথায় বলে, ভাগ্য বলে কিছু নেই, সবই মানুষের সৃষ্টি। একসময় তার বাবার পাঠানো অর্থ বন্ধ হয়ে যায়। দেখতে দেখতে বয়সও বেড়ে যায়, চাকরির উপযুক্ত সময় পেরিয়ে যায়। তারপর সে গ্রামে ফিরে আসে। এখন তার নতুন পরিচয় হযরত শাহ সুফী রফিকুল ইসলাম চৌধুরী (র.)। কামেল পীর হিসেবে তার জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।
প্রশ্ন:
ক. সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ কত সালে জন্মগ্রহণ করেন?
খ. ‘তাই তারা ছুটে, ছুটে।’ কেন ছুটে?
গ. উদ্দীপকের রফিকুল ইসলামের সঙ্গে মজিদের তুলনামূলক আলোচনা কর।
ঘ. সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ ‘লালসালু’ উপন্যাসে মজিদ চরিত্রের মধ্য দিয়ে কী ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন তা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর:
ক. সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ কত সালে জন্মগ্রহণ করেন?
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ ১৯২২ সালের ১৫ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন।
খ. ‘তাই তারা ছুটে, ছুটে।’ কেন ছুটে?
এ বাক্যে “ছুটে, ছুটে” বলতে বোঝানো হয়েছে যে চরিত্রগুলি বা ব্যক্তি কোনো উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য অর্জনের জন্য দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। তারা কোনো না কোনো উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য ছুঁতে ছুটে চলেছে, এটি তাদের মানসিক অবস্থার ইঙ্গিত। হতে পারে, তারা দুঃখ বা কষ্টের মধ্যে দিয়ে দ্রুত বেরিয়ে আসতে চায়, অথবা তাদের জীবনের কোনো কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণের জন্য ছুটে চলছে।
গ. উদ্দীপকের রফিকুল ইসলামের সঙ্গে মজিদের তুলনামূলক আলোচনা কর।
রফিকুল ইসলাম এবং মজিদের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। রফিকুল ইসলাম ছিলেন একজন ব্যক্তি, যিনি উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে শহরে গিয়ে রাজনৈতিক মতাদর্শে আকৃষ্ট হয়েছিলেন, পরে ধর্মীয় জীবন বেছে নিয়েছিলেন। তার জীবনযাত্রা পরিবর্তিত হয়ে একটি আধ্যাত্মিক দিকের দিকে গিয়েছে, এবং তিনি হযরত শাহ সুফী রফিকুল ইসলাম চৌধুরী নামেও পরিচিত হয়ে ওঠেন। তার জীবন ছিল একটি সন্ধানী যাত্রা, যেখানে তিনি নিজের সংকটকে কাটিয়ে উঠে আধ্যাত্মিকতার পথে এগিয়ে গেছেন।
মজিদ চরিত্রটি ছিল একজন সাধারণ যুবক, যে তার জীবনযাত্রায় নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের অনুসরণ করেছে। মজিদ ছিল সমাজের নানা অনাচার ও অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করা এক আদর্শিক চরিত্র। তার জীবনে কোনো ধরনের আধ্যাত্মিক বা ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি ছিল না, তবে সমাজের প্রতিষ্ঠিত রীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ছিল তার জীবনযুদ্ধের মূল প্রতিফলন।
তাহলে, রফিকুল ইসলাম এবং মজিদ চরিত্রের মধ্যে মূল পার্থক্য হলো তাদের জীবনের উদ্দেশ্য ও জীবনদৃষ্টিভঙ্গি। রফিকুল ইসলাম আধ্যাত্মিকতা ও ধর্মীয় জীবনের দিকে এগিয়ে গেছেন, যেখানে মজিদ তার আদর্শিক লড়াই এবং সমাজের রীতি-নীতির বিরুদ্ধে এক সামাজিক আন্দোলনের প্রতিনিধিত্ব করেছে।
ঘ. সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ ‘লালসালু’ উপন্যাসে মজিদ চরিত্রের মধ্য দিয়ে কী ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন তা ব্যাখ্যা কর।
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ “লালসালু” উপন্যাসের মাধ্যমে মজিদ চরিত্রের মধ্যে সামাজিক বাস্তবতা এবং মানুষের ব্যক্তিগত সংগ্রামকে তুলে ধরেছেন। মজিদ ছিল এক আদর্শিক যুবক, যার জীবন ছিল সংগ্রামী এবং নৈতিকতার পথে। সে সমাজের অধিকারী শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নিজের বিশ্বাস এবং মূল্যবোধ রক্ষা করার চেষ্টা করেছিল। ওয়ালীউল্লাহ্ মজিদের চরিত্রের মাধ্যমে সমাজের অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদের আওয়াজ তুলে ধরতে চেয়েছেন, যেখানে একজন সাধারণ যুবক নিজের মর্যাদা ও নৈতিকতা রক্ষার জন্য কঠোর সংগ্রাম চালিয়েছে।
এছাড়াও, মজিদ চরিত্রের মাধ্যমে ওয়ালীউল্লাহ্ মানবিক সম্পর্ক ও সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠার চেতনা জাগানোর চেষ্টা করেছেন। মজিদের সংগ্রাম শুধুমাত্র ব্যক্তিগত নয়, বরং এটি সামাজিক পরিবর্তন এবং মানুষের মধ্যে নৈতিকতার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার একটি বৃহত্তর উদ্দেশ্য।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৩
রাজিব মিয়া মসজিদের ইমাম হিসেবে যখন প্রথম কাজ শুরু করেছিল ১২ বছর আগে, তখনও সে বিয়ে করেনি। তবে এখন সে বিয়ে করে, তিনটি কন্যা এবং দুটি পুত্রের বাবা হয়েছে। তার বেতন মাত্র তিন হাজার টাকা, যা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন। তাই সে বাড়তি আয়ের জন্য গরিব মানুষকে ‘কপাল ঝাড়ানো’ দেয়, যদিও সে জানে এতে কোনো উপকার হয় না এবং এটি একধরনের অশুদ্ধ কাজ; তবু সে এটি করে। কাজটা তাকে অস্বস্তি দিলেও, সংসারের প্রয়োজনে সে এটি চালিয়ে যায়।
প্রশ্ন:
ক. মতিন খান কে?
খ. ‘রহিমা তো মজিদের পরিসরের বাইরে। যোগসূত্র হচ্ছে শামীমা।’—এটা কেন?
গ. উদ্দীপকের রাজিব মিয়া চরিত্রটির সাথে মজিদের তুলনা করা হলে কোথায় মিল এবং অমিল দেখা যায়?
ঘ. ‘লালসালু’ উপন্যাসটি পড়ার পর মজিদ চরিত্রটির প্রতি তোমার কী ধরনের অনুভূতি জাগে?
উত্তর:
ক. মতিন খান কে?
মতিন খান “লালসালু” উপন্যাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। তিনি একজন সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তার ভূমিকা মজিদ এবং তার আশেপাশের মানুষদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি একটি দ্বন্দ্বপূর্ণ চরিত্র, যার মাধ্যমে ওয়ালীউল্লাহ্ সমাজের কিছু বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি এবং রাজনৈতিক বাস্তবতাকে ফুটিয়ে তুলেছেন। মতিন খান ছিলেন একজন ক্ষমতাবান ব্যক্তি, যে সমাজের শোষণ ও শ্রেণীবৈষম্য সম্পর্কে সচেতন ছিল, তবে নিজের স্বার্থে তা উপভোগ করত।
খ. ‘রহিমা তো মজিদের পরিসরের বাইরে। যোগসূত্র হচ্ছে শামীমা।’—এটা কেন?
এই বাক্যটি থেকে বোঝানো হয়েছে যে, মজিদ এবং রহিমার মধ্যে সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। তাদের জীবনযাত্রা বা চিন্তা-ধারণার মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। কিন্তু শামীমা, যারা তাদের মাঝে সম্পর্ক বা যোগসূত্র সৃষ্টি করে, তাদের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে। শামীমা হয়তো মজিদ এবং রহিমার মাঝে একটি সেতুবন্ধন তৈরি করে, যাতে তাদের মধ্যে যোগাযোগ বা সম্পর্ক স্থাপন হতে পারে। এখানে শামীমা মজিদ ও রহিমার মধ্যে সম্পর্কের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে কাজ করছে।
গ. উদ্দীপকের রাজিব মিয়া চরিত্রটির সাথে মজিদের তুলনা করা হলে কোথায় মিল এবং অমিল দেখা যায়?
রাজিব মিয়া এবং মজিদের মধ্যে কিছু মিল এবং অমিল রয়েছে। মিলের দিক থেকে, দুজনেই নিজেদের জীবনে সংগ্রাম করছেন। রাজিব মিয়া তার পরিবারের জন্য কাজ করতে গিয়ে অস্বস্তিকর কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন, যেমন গরিব মানুষকে ‘কপাল ঝাড়ানো’। অন্যদিকে, মজিদও তার নৈতিক সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে এবং সমাজের শোষণ এবং অন্যায়কে প্রশ্ন করছে।
অমিলের দিক থেকে, রাজিব মিয়া সংসারের প্রয়োজনে অশুদ্ধ কাজ করে, যদিও সে জানে এটা ভুল, কিন্তু তার জীবনের বাস্তবতা তাকে এই কাজ করতে বাধ্য করছে। মজিদ, তবে, তার আদর্শ এবং নৈতিকতা মেনে চলতে চায়, তাই তার সংগ্রাম ছিল মানুষের ন্যায় এবং অধিকার প্রতিষ্ঠা করার। রাজিব মিয়া ব্যক্তিগত প্রয়োজনে অশুদ্ধ কাজ করছে, যেখানে মজিদ তার আদর্শের জন্য লড়াই করে।
ঘ. ‘লালসালু’ উপন্যাসটি পড়ার পর মজিদ চরিত্রটির প্রতি তোমার কী ধরনের অনুভূতি জাগে?
“লালসালু” উপন্যাসটি পড়ার পর মজিদ চরিত্রটি সম্পর্কে অনুভূতি মিশ্র। তার মধ্যে একটি মানবিক সংগ্রামের অনুভূতি রয়েছে, যেখানে সে নিজের আদর্শের জন্য সংগ্রাম করে। মজিদ সমাজের অনাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে, নিজের নৈতিকতার জন্য লড়াই করে। তবে তার জীবনযুদ্ধের মধ্যে কিছু সীমাবদ্ধতা ও হতাশার অনুভূতি আছে, কারণ সে সমাজের অনেক অসঙ্গতির বিরুদ্ধে একা দাঁড়াতে পারে না। তার সংগ্রাম প্রেরণাদায়ী হলেও, কখনো কখনো তার অবস্থান এক ধরনের সংকটে এবং অক্ষমতায় পরিণত হয়। তবে মজিদের চরিত্রের মধ্য দিয়ে একজন নৈতিক যুবকের আত্মবিশ্বাস ও সংগ্রামকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, যা পাঠকদের মাঝে এক ধরনের সজাগতা এবং সাহসের অনুভূতি জাগায়।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৪
তাসলিমা বেগম একজন গৃহিণী। তার স্বামী সোহেল মিয়া কৃষিকাজ করেন। তাদের কোনো সন্তানাদি হয়নি। বিয়ের বারো বছর পরেও তাসলিমা বেগমের গর্ভে কোনো সন্তান না হওয়ায় সোহেল মিয়া স্ত্রীর সম্মতি নিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর, আয়েশা, একটি পুত্র সন্তান জন্ম দিলে তাদের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন:
ক. সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ’র পিতার নাম কী?
খ. মজিদের দ্বিতীয় বিয়ের মূল কারণ কী?
গ. ‘লালসালু’ উপন্যাসের রহিমা এবং উদ্দীপকের তাসলিমা বেগম চরিত্রের মধ্যে মিল এবং অমিল কী?
ঘ. উদ্দীপকে বাঙালি সমাজে কী ধরনের সামাজিক অসামঞ্জস্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে? বিশ্লেষণ কর।
উত্তর:
ক. সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ’র পিতার নাম কী?
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ’র পিতার নাম ছিল সৈয়দ আব্দুল হাই।
খ. মজিদের দ্বিতীয় বিয়ের মূল কারণ কী?
মজিদের দ্বিতীয় বিয়ের মূল কারণ ছিল তার স্ত্রীর গর্ভধারণে অক্ষমতা। প্রথম বিয়ের পর দীর্ঘ সময় পার হলেও তার স্ত্রীর গর্ভে সন্তান না হওয়ায়, সামাজিক এবং পারিবারিক চাপের কারণে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর মাধ্যমে সন্তান লাভের চেষ্টাই ছিল তার দ্বিতীয় বিয়ের মূল উদ্দেশ্য। এটি সমাজের দৃষ্টিতে পরিবার চালানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল, যেখানে পুরুষের কাছে একটি পুত্র সন্তান থাকা বিশেষভাবে চাওয়া হতো।
গ. ‘লালসালু’ উপন্যাসের রহিমা এবং উদ্দীপকের তাসলিমা বেগম চরিত্রের মধ্যে মিল এবং অমিল কী?
রহিমা এবং তাসলিমা বেগম চরিত্রের মধ্যে কিছু মিল এবং অমিল রয়েছে।
মিল:
- দুজনেই গৃহিণী, সংসারের কাজ করে তাদের পরিবারকে পরিচালনা করছেন।
- তারা নিজেদের পরিবারকে ভালো রাখার জন্য সংগ্রাম করছেন এবং তাদের ব্যক্তিগত জীবনে কিছু কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন।
অমিল:
- রহিমার চরিত্রে ধীরে ধীরে সামাজিক, রাজনৈতিক চেতনা গড়ে উঠছিল, এবং তিনি তার জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনার জন্য সংগ্রাম করছিলেন। তবে তাসলিমা বেগম ছিলেন এক ধরনের নিঃসঙ্গ গৃহিণী, যিনি তার স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের কারণে খুবই হতাশ এবং তার জীবনযাত্রা চ্যালেঞ্জের মধ্যে ছিল।
- রহিমা, যিনি সমাজে পরিবর্তন আনতে চেয়েছিলেন, তার মধ্যে সমাজের প্রতি একটি প্রতিবাদী মনোভাব ছিল, তবে তাসলিমা বেগম শুধুমাত্র তার সংসারের সমস্যার সাথে মোকাবিলা করে জীবনের সংগ্রামে ছিল।
ঘ. উদ্দীপকে বাঙালি সমাজে কী ধরনের সামাজিক অসামঞ্জস্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে? বিশ্লেষণ কর।
এ উদ্দীপকে বাঙালি সমাজে যে সামাজিক অসামঞ্জস্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে তা হলো পুরুষের আধিপত্য এবং নারীকে সন্তান ধারণের জন্য চাপ দেওয়ার সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি। তাসলিমা বেগমের ক্ষেত্রে, তার স্বামী প্রথম বিয়েতে সন্তান না হওয়ায় দ্বিতীয় বিয়ে করেন, যেটি সমাজে পুরুষের জন্য একধরনের সামাজিক অধিকার হিসেবে দেখা হয়। নারীর শারীরিক ক্ষমতা, বিশেষ করে সন্তান ধারণের ক্ষমতা, অনেক সময় পুরুষের কাছে গুরুত্ব পায় এবং সমাজে পুরুষের সন্তানপ্রাপ্তি একটি বড় বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়।
এ ধরনের সামাজিক অসামঞ্জস্যের ফলে নারীরা অনেক সময় অস্বস্তি ও চাপ অনুভব করেন। তাদের ব্যক্তিগত জীবন বা সম্মান বড় জোরে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে, যদি তারা সন্তান ধারণে সফল না হন। এই ধরনের সামাজিক বিধি নারীর উপর একটি অপ্রত্যাশিত এবং অস্বস্তিকর চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে তারা নিজেদের আত্মবিশ্বাস এবং মর্যাদায় আঘাত পেতে পারে।
কেন ‘লালসালু’ উপন্যাস গুরুত্বপূর্ণ?
উপন্যাসটির প্রধান চরিত্রের মাধ্যমে ওয়ালীউল্লাহ আমাদের জীবনের বিভিন্ন দিকের মোকাবিলা এবং মানবিক মূল্যবোধের গভীর বিশ্লেষণ করেছেন। মজিদ, রহিমা, এবং অন্যান্য চরিত্রের মধ্য দিয়ে লেখক সমাজের নানা অসঙ্গতি ও মানবিক দুর্বলতার চিত্র তুলে ধরেছেন, যা প্রতিটি পাঠকের মধ্যে দার্শনিক প্রশ্ন জাগাতে সক্ষম।
লালসালু উপন্যাসে প্রধান চরিত্রের ভূমিকা
লালসালু উপন্যাসের প্রধান চরিত্র মজিদ, যিনি নিজের আদর্শের জন্য সংগ্রাম করছেন। তার সংগ্রাম শুধুমাত্র সামাজিক স্তরের নয়, বরং তার আত্মপরিচয় এবং নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখার জন্যও। উপন্যাসটি তার অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, আত্মবিশ্বাস এবং জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত নানা চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে, যা পাঠকদের ভাবনায় উজ্জীবিত করে।
লালসালু উপন্যাসের প্রশ্ন ও উত্তর PDF Download
আপনি যদি লালসালু উপন্যাসের প্রশ্ন ও উত্তর সহ একটি PDF ডাউনলোড করতে চান, তাহলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন এবং আপনার প্রয়োজনীয় পড়াশোনা এক জায়গায় নিয়ে আসুন।
লালসালু উপন্যাসের MCQ PDF Download
এছাড়াও, লালসালু উপন্যাসের MCQ (Multiple Choice Questions) প্রস্তুতির জন্যও একটি PDF ডাউনলোড করা যেতে পারে, যা আপনার প্রস্তুতিকে আরও শক্তিশালী করবে।
লালসালু উপন্যাসের প্রশ্ন ও উত্তর PDF Download
লালসালু উপন্যাসের MCQ PDF Download
এটি আপনাকে দ্রুত এবং কার্যকরীভাবে লালসালু উপন্যাসের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর এবং MCQ প্রস্তুতি নিতে সহায়তা করবে।