মাসি পিসি গল্পের পরিচিতি
‘মাসি পিসি’ গল্পটি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় গল্প, যা শিশুদের জন্য শিক্ষামূলক এবং বিনোদনমূলক। গল্পটির মাধ্যমে লেখক পারিবারিক সম্পর্ক, হাস্যরস, এবং দৈনন্দিন জীবনের নানা দিক ফুটিয়ে তুলেছেন। তবে, শুধু সাধারণ পাঠ নয়—এই গল্পটি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করলে অনেক সৃজনশীল প্রশ্নের উদ্ভব হয়, যা শিক্ষার্থীদের চিন্তন ও বিশ্লেষণ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
মাসি পিসি গল্পের মূল কথা
গল্পটির মূল ভাবনা হলো পারিবারিক সম্পর্কের গভীরতা, হাস্যরসের মাধ্যমে শিক্ষণীয় বার্তা প্রদান, এবং নৈতিকতা ও মূল্যবোধের প্রচার। লেখক চরিত্রগুলোর মধ্যে সম্পর্কের জটিলতা ও মজার দিকগুলো তুলে ধরেছেন, যা পাঠকদের মনে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে।
মাসি পিসি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন কেন গুরুত্বপূর্ণ। মাসি পিসি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন
সৃজনশীল প্রশ্ন গল্পের গভীরে যাওয়ার সুযোগ করে দেয় এবং শিক্ষার্থীদের কল্পনাশক্তি ও বিশ্লেষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটি শুধু গল্পের চরিত্র ও ঘটনা বোঝার জন্যই নয়, বরং এর পেছনের ভাবনা ও সামাজিক প্রেক্ষাপট বুঝতে সহায়তা করে।
৪টি সেরা সৃজনশীল প্রশ্ন ও তাদের ব্যাখ্যা।
এই লেখায় আমরা এমন চারটি চমৎকার সৃজনশীল প্রশ্ন বিশ্লেষণ করেছি, যা নতুন আইডিয়া তৈরি, গভীরভাবে চিন্তা করা এবং উদ্ভাবনী সমাধান খুঁজে বের করতে সহায়তা করবে। বিস্তারিত জানতে পড়ুন!
সৃজনশীল প্রশ্ন ১
মা তাকে প্রশ্ন করতেই থাকলেন। দেখলাম, সে বেশ গম্ভীর স্বভাবের। মার সব প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তর দিল, নিজের থেকে কোনো কথা বলল না। জানাল, তার নাম সুজাতা। আমাদের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে কাশীনাথ দত্ত রোডের একটি ছোট্ট ভাড়া বাড়িতে সে থাকে। স্বামী এবং একমাত্র ছেলে নিয়ে তার সংসার। তার স্বামী চার মাস ধরে বেকার, ঘরে চরম অভাব। তাই সংসারের প্রয়োজনে পর্দার আড়াল থেকে বেরিয়ে কাজ করতে এসেছে। এটাই তার প্রথম চাকরি। বেতন? সে তা জানে না। প্রতিদিন রান্না করে দিয়ে যাবে, কিন্তু খাবে না।
প্রশ্ন:
ক. মাসি-পিসি কীভাবে শহরে যেতেন?
খ. মাসি-পিসির জমানো টাকা কেন খরচ হয়ে গিয়েছিল?
গ. উদ্দীপকের সুজাতা ‘মাসি-পিসি’ গল্পের মাসি-পিসির কোন বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করেছে? আলোচনা কর।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘মাসি-পিসি’ গল্পের মূল ভাব সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করে কি? তোমার মতের পক্ষে যুক্তি দাও।
উত্তর:
ক. মাসি-পিসি কীভাবে শহরে যেতেন?
মাসি-পিসি শহরে যাওয়ার জন্য প্রথমে গঙ্গার ধারে নৌকো ধরতেন। এরপর সেই নৌকো করে নদী পার হয়ে কলকাতায় পৌঁছাতেন। তারা মূলত জীবিকা নির্বাহের জন্য শহরে যেতেন এবং প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করে আবার গ্রামে ফিরে আসতেন।
খ. মাসি-পিসির জমানো টাকা কেন খরচ হয়ে গিয়েছিল?
মাসি-পিসির জমানো টাকা তাদের জীবনের নানা প্রয়োজনে খরচ হয়ে গিয়েছিল। বিশেষ করে সংসারের আর্থিক সংকট, দৈনন্দিন খরচ ও দুঃসময়ের কারণে সেই টাকা শেষ হয়ে যায়। তারা নিজেদের কষ্টার্জিত অর্থ অনেক যত্ন করে জমিয়েছিলেন, কিন্তু বাস্তব জীবনের চাহিদার সামনে সেটি টেকসই হয়নি।
গ. উদ্দীপকের সুজাতা ‘মাসি-পিসি’ গল্পের মাসি-পিসির কোন বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করেছে? আলোচনা কর।
উদ্দীপকের সুজাতা ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আত্মনির্ভরশীলতা ও সংগ্রামী চেতনার বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করেছে। মাসি-পিসির মতো সুজাতাও পারিবারিক সংকটের কারণে ঘরের বাইরে বেরিয়ে কাজ করতে বাধ্য হয়েছে। মাসি-পিসির জীবনে যেমন স্বাবলম্বী হওয়ার একটি অদম্য স্পৃহা ছিল, সুজাতার ক্ষেত্রেও তাই দেখা যায়। তার স্বামী বেকার হয়ে যাওয়ায় সংসার চালানোর সম্পূর্ণ দায়িত্ব তার কাঁধে এসে পড়েছে। সে জানে না তার বেতন কত, তবুও পরিবারের জন্য সে পরিশ্রম করছে।
মাসি-পিসি যেমন সমাজের বাধাকে অতিক্রম করে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার পথ বেছে নিয়েছিলেন, সুজাতাও তেমনই অর্থনৈতিক দুরবস্থার মুখে দাঁড়িয়ে নিজের লজ্জা-সংকোচ ভুলে কাজে নেমেছে। এই সংগ্রামী মানসিকতা তাকে মাসি-পিসির সঙ্গে তুলনীয় করে তুলেছে।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘মাসি-পিসি’ গল্পের মূল ভাব সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করে কি? তোমার মতের পক্ষে যুক্তি দাও।
উদ্দীপকটি ‘মাসি-পিসি’ গল্পের সম্পূর্ণ ভাব ধারণ করে না, তবে গল্পের মূল ভাবের সঙ্গে বেশ কিছু মিল রয়েছে। ‘মাসি-পিসি’ গল্পে নারীর আত্মনির্ভরশীলতা, সংগ্রাম ও সমাজের রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে অবস্থান স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। মাসি-পিসি বিধবা হয়েও নিজেদের জীবিকা অর্জনের পথ বেছে নিয়েছিলেন এবং আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচতে চেয়েছিলেন।
অন্যদিকে, সুজাতাও কঠিন বাস্তবতার মুখে দাঁড়িয়ে চাকরি নিয়েছে। তবে মাসি-পিসির ক্ষেত্রে আত্মপ্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা ছিল বেশি, যেখানে সুজাতার মূল উদ্দেশ্য শুধুমাত্র পরিবার চালানো। মাসি-পিসির সংগ্রাম দীর্ঘদিনের, যেখানে সুজাতার সংগ্রাম এখনো নতুন। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি গল্পের মূল ভাবের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলেও এটি গল্পের সম্পূর্ণ ভাব প্রকাশ করতে পারেনি।
সৃজনশীল প্রশ্ন ২
চন্দনা বলে, ‘এত রাতে মেয়েছেলেকে কাছারিবাড়িতে ডাকতে তোমাদের লজ্জা করে না, রমেশ?’
রমেশ রাগে ফেটে পড়ে, ‘না যদি ভালোয় ভালোয় চলো, তাহলে বলছি, জোর করে ধরে নিয়ে যাবার হুকুম আছে।’
বেলা রান্নার বঁটিটা শক্ত করে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ‘সত্যি? জোর করে নিয়ে যাবে? এসো, দেখি কে আসে! বঁটির এক কোপে গলা আলাদা করে দেব।’
চন্দনা চিৎকার করে বলে, ‘আয় না, বদমাশগুলো! সামনে আয়! দা-এর এক কোপে গলা নামিয়ে দেব দু-একজনের।’
বেলা বলে, ‘শোনো রমেশ, এটা কোনো ছেলেখেলা নয়। তোমাদের সঙ্গে পারব না জানি, কিন্তু কয়েকজনকে ঠিকই জখম করব।’
চন্দনা দৃঢ় কণ্ঠে বলে, ‘আমরা মরব, কিন্তু হার মানব না!’
প্রশ্ন:
ক. চন্দনা ও বেলাকে ডাকতে কে আসে?
খ. তারা কীভাবে জীবিকা নির্বাহ করত?
গ. উদ্দীপকটিতে চন্দনা ও বেলার কোন বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে?
ঘ. উদ্দীপকটি ‘মাসি-পিসি’ গল্পের মূল ভাব সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করে কি? তোমার মতের পক্ষে যুক্তি দাও।
উত্তর:
ক. চন্দনা ও বেলাকে ডাকতে কে আসে?
চন্দনা ও বেলাকে ডাকতে রমেশ ও তার সঙ্গীরা আসে। তারা কাছারিবাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য চন্দনা ও বেলাকে হুমকি দেয় এবং প্রয়োজনে জোর করে ধরে নিয়ে যাওয়ার কথাও বলে।
খ. তারা কীভাবে জীবিকা নির্বাহ করত?
চন্দনা ও বেলা নিজেদের পরিশ্রমের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করত। তারা আত্মনির্ভরশীল নারী, যারা কঠোর পরিশ্রম করে নিজেরা জীবন চালাত। সমাজের অবহেলা ও বাধা অতিক্রম করে তারা স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করেছে।
গ. উদ্দীপকটিতে চন্দনা ও বেলার কোন বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে?
উদ্দীপকটিতে চন্দনা ও বেলার সাহস, প্রতিবাদী মানসিকতা ও আত্মরক্ষার শক্তি ফুটে উঠেছে। তারা ভয় পায় না; বরং অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে প্রস্তুত। রমেশ ও তার দলের সামনে তারা স্পষ্ট জানিয়ে দেয় যে, তারা সহজে হার মানবে না। বেলা রান্নার বঁটি ধরে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হয়, আর চন্দনা দা হাতে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চায়। এতে বোঝা যায়, তারা দৃঢ়চেতা ও আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন নারী, যারা অন্যায়ের কাছে মাথা নত করে না।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘মাসি-পিসি’ গল্পের মূল ভাব সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করে কি? তোমার মতের পক্ষে যুক্তি দাও।
উদ্দীপকটি ‘মাসি-পিসি’ গল্পের ভাবের সঙ্গে অনেকাংশে মিল রাখলেও পুরোপুরি তা ধারণ করেনি। ‘মাসি-পিসি’ গল্পে মাসি ও পিসি নারীর আত্মনির্ভরশীলতা, সংগ্রাম ও স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার সংকল্পকে তুলে ধরেছেন। চন্দনা ও বেলার ক্ষেত্রেও একই ধরনের সাহসিকতা ও সংগ্রাম দেখা যায়, তবে তাদের প্রতিরোধের রূপ ভিন্ন। মাসি-পিসি নিজেদের কাজের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল হয়েছেন, অন্যদিকে চন্দনা ও বেলা অস্ত্র তুলে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চায়।
এছাড়া, মাসি-পিসির সংগ্রাম দীর্ঘমেয়াদি, যেখানে তারা ক্রমাগত বাধার মুখে লড়াই করে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছেন। চন্দনা ও বেলার লড়াই তাৎক্ষণিক, যা একটি বিশেষ মুহূর্তের প্রতিবাদকে তুলে ধরে। ফলে বলা যায়, উদ্দীপকটি ‘মাসি-পিসি’ গল্পের ভাবের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ হলেও তা পুরোপুরি গল্পের মূল ভাব প্রকাশ করতে পারেনি।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৩
‘আহারে! মাইয়াডারে মাইরা ফালাইছো না! ওই পাষাণী, দরজা খোল! মারিস না, মারিস না! জাহান্নামে যাবি, মারিস না!’ – বাইরে থেকে দুই হাত দিয়ে ঝাঁপিটা ঠেলছে নূরজাহান। আবুল একবার তাকিয়ে দেখল, কিন্তু ঝাঁপি খুলল না।
বউকে মারার মধ্যে একটা পৈশাচিক আনন্দ পায় আবুল। মারধর করে মরে ফেলতে পারলে তার যেন সুখ হয়। দু’টি বউকে এর আগে প্রাণে মেরে ফেলেছে। প্রথম বউ ছিল গ্রামেরই মেয়ে, নাম ফাতেমা। একটু খাটো, মোটা, এবং শ্যামলা। মেয়ে ছিল অত্যন্ত সংযমী। শান্ত স্বভাবের। আবুল কত মেরেছে তাকে, কিন্তু মেয়ে কখনো প্রতিবাদ করেনি। একটাও শব্দ বের হয়নি তার মুখ থেকে।
প্রশ্ন:
ক. মস্ত কাটারিটা দেখতে কীসের মতো ছিল?
খ. ফাতেমা কেন মারধর সহ্য করত?
গ. উদ্দীপকের আবুল ‘মাসি-পিসি’ গল্পের কোন চরিত্রকে প্রতিনিধিত্ব করে? – ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের ফাতেমা এবং ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদি একই পরিস্থিতির শিকার।” – মন্তব্যটি যাচাই কর।
উত্তর:
ক. মস্ত কাটারিটা দেখতে কীসের মতো ছিল?
মস্ত কাটারিটা দেখতে একধরনের ভয়ংকর অস্ত্রের মতো ছিল, যা দিয়ে মানুষ হত্যা করা সম্ভব। এটি ধারালো এবং ভারী ছিল, যা দিয়ে এক কোপে কিছু কাটা সম্ভব।
খ. ফাতেমা কেন মারধর সহ্য করত?
ফাতেমা তার স্বামীর অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করত, কারণ সে ছিল অত্যন্ত সংযমী ও শান্ত স্বভাবের মেয়ে। সমাজের নিয়ম ও পারিবারিক বন্ধনের কারণে সে কখনো প্রতিবাদ করেনি। নারীদের প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর পরিবর্তে সে চুপচাপ অত্যাচার সহ্য করেছে, যা পিতৃতান্ত্রিক সমাজের এক করুণ বাস্তবতা।
গ. উদ্দীপকের আবুল ‘মাসি-পিসি’ গল্পের কোন চরিত্রকে প্রতিনিধিত্ব করে? – ব্যাখ্যা কর।
উদ্দীপকের আবুল ‘মাসি-পিসি’ গল্পের সেই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রতিনিধি, যারা নারীদের শোষণ ও নির্যাতন করে নিজেদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। গল্পে পুরুষতন্ত্রের নিপীড়নমূলক দৃষ্টিভঙ্গি এবং নারীদের প্রতি অবহেলা স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। মাসি-পিসির জীবনেও সমাজের পুরুষরা নানা বাধা সৃষ্টি করেছিল এবং তাদের কঠোর পরিশ্রমের পরও তাদের মর্যাদা দেয়নি।
আবুলও একই দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিচ্ছবি—সে নারীদের মানুষ হিসেবে দেখে না, বরং তাদের প্রতি নিষ্ঠুর ও সহিংস আচরণ করে। তার হাত থেকে কেউ রক্ষা পায় না, এমনকি সে নিজের স্ত্রীদের প্রাণেও মেরে ফেলেছে। এতে বোঝা যায়, আবুল সেই সমাজেরই প্রতিচিত্র, যেখানে নারীরা নির্যাতিত হয় এবং প্রতিবাদ না করলেই সমাজ তাদের গ্রহণ করে।
ঘ. “উদ্দীপকের ফাতেমা এবং ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদি একই পরিস্থিতির শিকার।” – মন্তব্যটি যাচাই কর।
উদ্দীপকের ফাতেমা এবং ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদি একই পরিস্থিতির শিকার, কারণ তারা দুজনই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের শোষণ ও নিপীড়নের শিকার হয়েছে। ফাতেমা তার স্বামীর অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করেছে, প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি, কারণ সে জানত যে সমাজ তাকে কোনো সহায়তা করবে না।
অন্যদিকে, আহ্লাদিও ছিল এক অবহেলিত নারী, যে স্বামীর অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার হয়েছিল। তার জীবনেও দুঃখ-কষ্ট ছিল, কিন্তু সে চুপচাপ তা সহ্য করেছে, কারণ নারীদের পক্ষে তখন প্রতিবাদ করা সহজ ছিল না।
তবে, কিছু পার্থক্যও রয়েছে। আহ্লাদির জীবনে শারীরিক নির্যাতনের চেয়ে মানসিক কষ্ট বেশি ছিল, যেখানে ফাতেমার ক্ষেত্রে শারীরিক ও মানসিক দুটোই ছিল। কিন্তু সার্বিকভাবে, তারা দুজনই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নির্মমতার শিকার, যেখানে নারীদের কষ্ট চিরস্থায়ী এবং পুরুষদের দয়া-নির্ভর। ফলে, মন্তব্যটি যথার্থ।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৪
ইউরোপের মহান দার্শনিক প্লেটো যখন মিসর ভ্রমণে যান, তখন নিজের খরচ চালানোর জন্য মাথায় করে তেল বিক্রি করতেন। যে ব্যক্তি কুঁড়ে, আলসে, ঘুষখোর বা চোর, সেই সত্যিই হীন। কিন্তু ব্যবসা বা ছোট স্বাধীন পেশায় মানুষ কখনো হীন হয় না—হীন হয় মিথ্যা চতুরতা ও প্রতারণার কারণে। যদি শুধুই জাত যাওয়ার ভয় বা সম্মান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় তুমি অন্যের দয়ায় নির্ভর করে জীবন কাটিয়ে দাও, তবে প্রকৃত সম্মান কোথায়, তা তুমি কখনো অনুভব করবে না।
প্রশ্ন:
ক. শকুনরা উড়ে এসে কোথায় বসেছে?
খ. রমেশ কেন মামলা করতে চাইল?
গ. উদ্দীপকের প্লেটোর মাঝে ‘মাসি-পিসি’ গল্পের কোন বিষয়ের সাদৃশ্য রয়েছে?- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “যদিও মিল রয়েছে, প্লেটোর তেল বিক্রি ও মাসি-পিসির শাকসবজি বিক্রির উদ্দেশ্যে পার্থক্য রয়েছে” – মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।
উত্তর:
ক. শকুনরা উড়ে এসে কোথায় বসেছে?
শকুনরা উড়ে এসে মৃত প্রাণীর দেহের ওপর বসে, যা সাধারণত মৃত্যুর বা দুর্বলতার প্রতীক। এটি সমাজের সেই শ্রেণির মানুষদের বোঝায়, যারা অন্যের দুর্বলতা বা বিপদের সুযোগ নেয় এবং শোষণ করে।
খ. রমেশ কেন মামলা করতে চাইল?
রমেশ প্রতারণার শিকার হয়ে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য মামলা করতে চেয়েছিল। সে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে নিজের ন্যায্য পাওনা বুঝে নিতে চেয়েছিল, যাতে প্রতারকদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া যায় এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়।
গ. উদ্দীপকের প্লেটোর মাঝে ‘মাসি-পিসি’ গল্পের কোন বিষয়ের সাদৃশ্য রয়েছে? – ব্যাখ্যা কর।
উদ্দীপকের প্লেটো এবং ‘মাসি-পিসি’ গল্পের মধ্যে স্বাবলম্বিতা ও পরিশ্রমের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের দারুণ মিল রয়েছে। প্লেটো একজন মহান দার্শনিক হয়েও জীবিকা নির্বাহের জন্য মাথায় করে তেল বিক্রি করতেন, যা কর্মের মর্যাদা এবং স্বনির্ভরতার প্রতীক।
একইভাবে, ‘মাসি-পিসি’ গল্পের প্রধান চরিত্র মাসি ও পিসি সমাজের বাধা উপেক্ষা করে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য সংগ্রাম করেছিল। তারা নিজেরাই শাকসবজি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করত এবং পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ওপর নির্ভরশীল না থেকে আত্মনির্ভরশীল জীবন গড়ে তুলেছিল।
উভয় ক্ষেত্রেই সম্মান এবং সাফল্য অর্জনের মূল ভিত্তি ছিল কঠোর পরিশ্রম ও আত্মনির্ভরশীলতা, যা গল্প এবং উদ্দীপকের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ মিল গড়ে তোলে।
ঘ. “যদিও মিল রয়েছে, প্লেটোর তেল বিক্রি ও মাসি-পিসির শাকসবজি বিক্রির উদ্দেশ্যে পার্থক্য রয়েছে” – মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।
প্লেটোর তেল বিক্রি এবং মাসি-পিসির শাকসবজি বিক্রির মধ্যে মূল উদ্দেশ্যে পার্থক্য রয়েছে। প্লেটো মূলত এক দার্শনিক এবং জ্ঞানান্বেষী ব্যক্তি ছিলেন, যিনি জীবিকা নির্বাহের জন্য সাময়িকভাবে তেল বিক্রি করেছিলেন। তার লক্ষ্য ছিল অর্থ উপার্জন নয়, বরং জ্ঞানার্জন ও জীবন সম্পর্কে গভীর উপলব্ধি লাভ করা।
অন্যদিকে, মাসি-পিসির শাকসবজি বিক্রির উদ্দেশ্য ছিল একেবারেই বাস্তবিক ও জীবিকার প্রয়োজন মেটানোর জন্য। তারা পুরুষদের ওপর নির্ভর না করে স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করতে চেয়েছিল। তাদের জীবন সংগ্রামের মধ্যে টিকে থাকার বাস্তব প্রয়োজনে তারা এই পথ বেছে নেয়।
ফলে, উভয়ের মধ্যে আত্মনির্ভরতার মিল থাকলেও উদ্দেশ্যগতভাবে পার্থক্য রয়েছে—প্লেটোর তেল বিক্রি ছিল সাময়িক এবং জ্ঞানান্বেষণের পথে একটি মাধ্যম, আর মাসি-পিসির ব্যবসা ছিল তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য একটি আবশ্যিক উপায়। তাই মন্তব্যটি যথার্থ।
মাসি পিসি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর PDF
আপনি যদি এই বিশ্লেষণটি পিডিএফ আকারে সংরক্ষণ করতে চান, তাহলে এটি ডাউনলোড করতে পারেন। এতে গল্পের মূল ভাবনা, সৃজনশীল প্রশ্ন ও বিশ্লেষণ একত্রিত থাকবে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই সহায়ক হবে।