আফগানিস্তান মধ্য এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ, যার অর্থনীতি মূলত কৃষি, খনিজসম্পদ ও বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল। দেশটির বাজারব্যবস্থা ঐতিহ্যবাহী, আধুনিক ও বহুমুখী বৈশিষ্ট্যের সংমিশ্রণ। আফগানিস্তানের বাজার ব্যবস্থা অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের বাজার ব্যবস্থার সঙ্গে কিছু মিল থাকলেও দেশটির ভৌগোলিক অবস্থান, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে এতে বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য দেখা যায়।
আফগানিস্তানের বাজারের বৈশিষ্ট্য
ঐতিহ্যবাহী ও আধুনিক বাজারের সংমিশ্রণ
আফগানিস্তানের বাজারব্যবস্থায় প্রাচীন ও আধুনিক বাজার কাঠামোর সহাবস্থান দেখা যায়। দেশটির বেশিরভাগ বাজার এখনও প্রচলিত “বাজার” বা হাট-ভিত্তিক। এখানে স্থানীয় কৃষিপণ্য, কারুশিল্প ও মসলার কেনাবেচা হয়। কাবুল, হেরাত, মাজার-ই-শরিফের মতো শহরগুলোতে আধুনিক শপিং মল, সুপারমার্কেট ও আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের দোকান গড়ে উঠেছে।
কৃষিপণ্যের আধিপত্য
আফগানিস্তানের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর হওয়ায় বাজারে কৃষিপণ্যের আধিপত্য লক্ষ্য করা যায়। প্রধান কৃষিপণ্য: গম, ফল (আঙ্গুর, ডালিম, বাদাম), সবজি ও খেজুর। আফগানিস্তানের শুকনো ফল ও বাদাম আন্তর্জাতিক বাজারেও রপ্তানি হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাপ্তাহিক ও মাসিক কৃষি বাজার বসে।
খনিজসম্পদ ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম
আফগানিস্তান খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। তাই বাজারে খনিজ ব্যবসারও গুরুত্ব রয়েছে। তামা, স্বর্ণ, লিথিয়াম ও লোহাসহ বিভিন্ন খনিজ সম্পদ আমদানি ও রপ্তানি করা হয়। খনিজ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বাজার কাঠামো সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগের ওপর নির্ভরশীল।
সীমান্ত ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্ব
আফগানিস্তান চারটি গুরুত্বপূর্ণ দেশের সীমান্তের কাছাকাছি, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য: আফগানিস্তানের বেশিরভাগ আমদানি আসে পাকিস্তান থেকে। খাদ্য, পোশাক, ওষুধ, নির্মাণসামগ্রী ইত্যাদি পাকিস্তান থেকে আসে।
ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য: তেল, পেট্রোলিয়াম ও শিল্পপণ্য ইরান থেকে আমদানি হয়।
চীনের সঙ্গে সম্পর্ক: আফগানিস্তান চীনের সঙ্গে খনিজসম্পদ ও নির্মাণ সামগ্রীতে বাণিজ্য সম্প্রসারণ করছে।
কারুশিল্প ও ঐতিহ্যবাহী পণ্যের বাজার
আফগানিস্তানের বাজারে স্থানীয় কারুশিল্প ও ঐতিহ্যবাহী পণ্যের ব্যাপক কদর রয়েছে। আফগান কার্পেট, পশমি পোশাক, হস্তনির্মিত অলংকার ও সিরামিক শিল্প বাজারের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। হেরাত, কাবুল ও বামিয়ান অঞ্চলের বাজারে এসব পণ্য পাওয়া যায় এবং এগুলো আন্তর্জাতিক বাজারেও রপ্তানি করা হয়।
মুদ্রাস্ফীতি ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ
আফগানিস্তানের বাজার একাধিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বাজারে স্থিতিশীলতা অনেকাংশে ব্যাহত হয়েছে। মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের ঝুঁকি অনেক বেশি।
অর্থনীতিতে অবৈধ ব্যবসার ভূমিকা
আফগানিস্তানে মাদক ব্যবসা ও কালোবাজার অর্থনীতির একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে। আফগানিস্তান বিশ্বে আফিম উৎপাদনে শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর মধ্যে একটি। কিছু অঞ্চলে অবৈধ অস্ত্র ও জ্বালানির কালোবাজারও প্রচলিত।
প্রযুক্তি ও ডিজিটাল বাজারের উত্থান
বিগত কয়েক বছরে আফগানিস্তানের ডিজিটাল অর্থনীতি কিছুটা উন্নতি করেছে।
অনলাইন ব্যবসা: তরুণ উদ্যোক্তাদের নেতৃত্বে কাবুল ও অন্যান্য বড় শহরগুলোতে ই-কমার্স ব্যবসা বেড়েছে।
মোবাইল ব্যাংকিং: প্রযুক্তির মাধ্যমে মোবাইল লেনদেন ও ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থা চালু হয়েছে।
শেষ কথা, আফগানিস্তানের বাজার এক গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, যেখানে কৃষি, খনিজ, কারুশিল্প, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং আধুনিক প্রযুক্তির মিশ্রণ দেখা যায়। তবে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অবকাঠামোর অভাব ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের কারণে এর উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সঠিক নীতিমালা, নিরাপত্তা ও বিনিয়োগের মাধ্যমে আফগানিস্তানের বাজার আরও উন্নত হতে পারে এবং এটি আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।